২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল বলিউড অঙ্গনকে শোকস্তব্ধ করে পরপারে পাড়ি জমান অভিনেতা ইরফান খান। কোলন ইনফেকশনে মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের এই লড়াইয়ে মৃত্যুর পদধ্বনি টের পেয়েছেন ইরফান, তাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হয়েছেন। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই ইরফানের জীবনের শেষ দুই বছরের স্মৃতিচারণ করেছেন অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ।
‘মকবুল’ (২০০৩), ‘সাত খুন মাফ’ (২০১১) সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে ইরফান ও নাসিরুদ্দিন একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। পর্দায় হোক বা পর্দার বাইরে, দুজনের বন্ধুত্ব সবসময়ই অটুট ছিল। বন্ধুর প্রস্থান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নাসিরুদ্দিন জানালেন, দুই বছর আগে থেকেই মৃত্যু নিয়ে ইরফানের যে সহজাত সচেতনতা ছিল, তা তাকে অভিভূত করে। বলেন, “সে (ইরফান) যখন লন্ডনে হাসপাতালে ছিল, তখনো আমাদের কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছে। সে যেভাবে এর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে তা একই সঙ্গে বিস্ময়কর ও শিক্ষণীয় ছিল। সে বলতো, মৃত্যুকে এগিয়ে আসতে দেখছি। এমন সুযোগ কয়জনই বা পায়? যেন কেউ দেখতে পাচ্ছে যে মৃত্যুদূত তার দিকে এগিয়ে আসছে, আর একে স্বাগতই জানাচ্ছে সে।’’
ইরফানের মৃত্যুকে ‘বিশাল এক ক্ষতি’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শরীরের কলকব্জা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাওয়া, এটা আমাদের হাতে ছিল না। কারোর এতে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।’’
নাসিরুদ্দিন জানালেন, তিনি মৃত্যু নিয়ে ভাবেন না–আর এ নিয়ে ভাবনারও কিছু নেই। এই ভাবনা বরং জীবনের জন্য ক্ষতিকর। তার মতে, জীবনের সব থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মৃত্যু, আবার একে এড়ানোও সম্ভব নয়।
বললেন, “আমার যখন যাওয়ার সময় হবে, তখন যাবো। যতক্ষণ বেঁচে আছি, সতর্ক থাকবো, বেঁচে থেকে জীবনকে উপভোগ করবো। আমি চাইবো না আমার মৃত্যুর পর বন্ধুরা শোকে কাতর হোক। চাইবো তারা একে উদযাপন করুক, হাসুক, আর আমি জীবনে যা করেছি তা নিয়ে কথা বলুক। আমি কীভাবে মারা গেলাম তা নয়, কীভাবে বেঁচে ছিলাম তা নিয়েই বরং তারা কথা বলুক– এটাই আমার চাওয়া।’’
পর্দায় ইরফানের সাবলীলতা নিয়ে সম্প্রতি হইচই-এর ‘তারাদের শেষ দর্পন’ ডকুমেন্টারি সিরিজে কথা বলেছেন তার স্ত্রী সুতপা সিকদার। তিনি বলেন, “আমি এত মানুষের কাছে এতবার শুনেছি যে ইরফানকে দেখে মনেই হয় না সে অভিনয় করছে। আমি সবসময় ভেবে এসেছি যে এই ‘অভিনয় না করা’র পেছনে এতটা শ্রম থাকে, ‘অভিনয় করা’টা কতটুকু প্রচেষ্টার ফল। আমার সারা জীবনে আর একটা মানুষকেও এমন কঠোর পরিশ্রম করতে দেখিনি।’’