‘অপরাজিত’র নতুন রূপ ‘অভিযাত্রিক’

 

কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি ‘অপু’ চরিত্রটিকে চলচ্চিত্রের পর্দায় যেন বাস্তব করেই ফুটিয়ে তুলেছিলেন কিংবদন্তি নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। অপুকে কেন্দ্র করে নির্মিত তিনটি চলচ্চিত্রের দ্বিতীয়টি ‘অপরাজিত’, যার শেষাংশ অবলম্বনে নতুন করে সাদাকালো চলচ্চিত্র ‘অভিযাত্রিক’ নির্মাণ করেছেন শুভ্রজিৎ মিত্র।

এই বছরের জানুয়ারিতে বাংলা ভাষার এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে। অপু আর কাজলের কাশীযাত্রা দিয়ে চলচ্চিত্রটি শুরু হয়, আর কাহিনীপ্রবাহে চেনা সব চরিত্রের সঙ্গে দর্শকের দেখা হয়। ভ্রাম্যমাণ অপুর যাত্রাপথে একে একে আসে কাশীর অলিগলি, কলকাতার ভাড়া বাড়ি আর নিশ্চিন্দিপুরের ভিটে।

কিছুটা ধীরগতির ‘অভিযাত্রিক’ চলচ্চিত্র শুরুতেই আনুশকা শঙ্করের আঙুলে শোনা যায় সেতারের টঙ্কার। গোটা চলচ্চিত্র জুড়ে এই প্রশান্তির আবহাওয়া বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা। আর এর বদৌলতে নির্মাণের ত্রুটি-বিচ্যুতিও অনেকটাই তুচ্ছ হয়ে যায়।

অপুর ভূমিকায় অর্জুন চক্রবর্তী নিজ অভিব্যক্তি এবং শরীরী ভাষায় চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছেন। চলচ্চিত্রের ‘লীলা’ চরিত্রটি উপন্যাসের পাতা থেকেই উঠে এসেছে, তবে তার পরিণতি কিছুটা ভিন্ন। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, আর ‘কাজল’ চরিত্রে আছেন আয়ুষ্মান মুখোপাধ্যায়। ট্রেনযাত্রার শেষে কাজলের হাত ধরে অপু যখন কাশীর ঘাটে এসে দাঁড়ায়, তার মনের আঙিনা জুড়ে ভিড় করে অতীতের নানা স্মৃতি। চলচ্চিত্রের এই অংশে কাশীকে সত্যজিৎ রায়ের দৃষ্টিভঙ্গিতেই ধরার চেষ্টাটা স্পষ্ট।

‘অভিযাত্রিক’ চলচ্চিত্রের কলকাতা-পর্বে দুইভাগ হয়ে থাকা হাওড়া ব্রিজ, ‘দেবদাস’-এর পোস্টার, সুভাষচন্দ্র বসু ও রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে বক্তৃতা, স্বদেশীদের পিকেটিং – এই সবই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়টাকে পর্দায় তুলে ধরে। এসব কিছুর মাঝে অপু-কাজলের সংক্ষিপ্ত শহরবাস সেরে গল্প যখন নিশ্চিন্দিপুরে গিয়ে পৌঁছে, তখনই ফিরে আসতে শুরু করে ‘পথের পাঁচালী’র স্মৃতি।

গ্রামে ফিরে অপু দেখে, বাইরের দুনিয়া আমূল বদলে গেলেও তার শৈশবের স্বর্গরাজ্য, এখানকার মানুষ ও তাদের জীবনযাপন খুব একটা বদলায়নি। অপু গিয়ে ওঠে সতু-রাণুদিদির বাড়িতে। ‘রাণু’ চরিত্রে শ্রীলেখা মিত্র অভিনয় করেছেন। আর অপুর একাকিত্বে, দ্বিধার দোলাচলে স্বপ্নদৃশ্যের সংলাপহীন সঙ্গী ‘অপর্ণা’ চরিত্রে আছেন দিতিপ্রিয়া রায়।

‘চাঁদের পাহাড়’-এর শঙ্করের সঙ্গে অপুর দেখা হয়েছিল কাশীর ঘাটেই। সব্যসাচী চক্রবর্তীর অভিনীত এই চরিত্রটি অপুকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার উৎসাহ যোগায়, জানায় ইসলাম-খ্রিস্ট-হিন্দু ধর্মের গোড়ার কথা আসলে একই। গল্পের শেষে শঙ্করের সঙ্গে পাহাড়ে বেরিয়ে পড়ে অপু। বিক্রম ঘোষের আবহসঙ্গীতে ভর করে অজানার উদ্দেশে এই যাত্রায় শামিল হবেন দর্শকও।

এমন আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ বিনোদন