‘‘এ ভাবে কেউ পদ্মশ্রী দেয়? এরা জানে না আমি কে! নব্বই বছরে আমায় শেষে পদ্মশ্রী নিতে হবে? আর এই ফোন করে বললেই চলে যাবো আমি? শিল্পীদের কোনো সম্মান নেই আর।’’ ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাকে ফোনে এসব কথা বলেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
২৫ জানুয়ারি দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ফোন করে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হবে, তিনি নিতে রাজি কিনা। একথায় অপমান বোধ করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, তার জবাব, ‘‘আমার পদ্মশ্রীর কোনো দরকার নেই। শ্রোতারাই আমার সব।’’
সন্ধ্যার পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সচিবালয় থেকে ফোন করা হয়েছিল। তারা মনে করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো একজন বর্ষীয়ান শিল্পীর জন্য পদ্মশ্রী সঠিক সম্মান নয়।
‘চন্দন ও পালঙ্কে শুয়ে’, ‘মধু মালতি ডাকে আয়’, ‘আমি তার ছলনায় ভুলবো না’, ‘এ শুধু গানের দিন এ লগন গান শোনাবার’, ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা’, ‘কি বৃষ্টি দেখো মিষ্টি কি বৃষ্টি এ সকাল’, ‘জানি না ফুরোবে কবে এই পথচাওয়া’, ‘আকাশের অস্তরাগে’-এর মতো বহু জনপ্রিয় গানের গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ১৯৭১ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ সিনেমা গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ২০১১ সালে রাজ্য সরকার তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের দিক থেকে আসেনি কোনো পুরস্কার।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর, দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায়। প্রখ্যাত শিল্পী গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর শিষ্য ছিলেন তিনি। গুলাম আলি খাঁর কাছ থেকেও গানের তালিম নেন। পঞ্চাশের দশকে উত্তম-সুচিত্রার সিনেমায় সুচিত্রা সেনের ঠোঁটে সন্ধ্যার অনেক গান ঠাঁই করে নেয়। প্রয়াত গীতিকার শ্যামল গুপ্ত সন্ধ্যার স্বামী।