ষষ্ঠ আফ্রিকান হিসেবে সাহিত্যে নোবেলজয়ী

আবদুলরাজাক গুরনাহ

সাহিত্যে নোবেল পেলেন যুক্তরাজ্যনিবাসী তানজানিয়ান সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ। সাম্রাজ্যবাদের মুখে, নিজ দেশের বাইরে ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে শরণার্থীদের জীবন নিয়ে লেখায় তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানিয়েছে সুইডিশ একাডেমি।

একাডেমির পক্ষ থেকে ৭ অক্টোবর এই ঘোষণা দেয়া হয়। তারা জানায়, নিজ লেখায় “উপনিবেশবাদের অমোচনীয় ও সকরুণ প্রভাবের অনুপ্রবেশ” ফুটিয়ে তুলেছেন গুরনাহ। জটিল সব বৈশ্বিক ইস্যুতেও সত্যের প্রতি তার অবিচল আস্থার প্রশংসা করে প্রতিষ্ঠানটি বিবৃতিতে জানায়, “তার উপন্যাসগুলো গতানুগতিক বর্ণনা থেকে সরে এসে পূর্ব আফ্রিকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কথা তুলে ধরে, যা বিশ্বের অন্য অনেক জায়গার মানুষের কাছেই অজানা।”

নোবেল পুরস্কার জয়ের অংশ হিসেবে গুরনাহ পাচ্ছেন স্বর্ণপদক, আর ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা– যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ কোটি টাকা। ষষ্ঠ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত সাহিত্যিক হিসেবে নোবেল পেলেন তিনি। এর আগে ১৯৮৬ সালে নাইজেরিয়ান ওল সোয়িংকা এবং ১৯৯৩ সালে মার্কিন টনি মরিসন সাহিত্যে নোবেল জিতেছিলেন।

নোবেল প্রাপ্তির খবরে ৭৩ বছর বয়সী গুরনাহ বলেন, “দারুণ এক ব্যাপার এটা– বড় এক পুরস্কার, আর চমৎকার সব লেখকের বিশাল এক তালিকায় জায়গা পাওয়া– আমি এখনো সামলে উঠতে পারিনি। এ এমন এক বিস্ময়কর ব্যাপার যা বিশ্বাস করতে আমার ঘোষণা শোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমি খুবই অভিভূত ও গর্বিত।” এই ঘটনায় তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় উপনিবেশবাদ ও শরণার্থী সংকটের বিষয়গুলো আবারো আলোচনায় আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, “এই বিষয়গুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। গোটা বিশ্বে মানুষ মারা যাচ্ছে, যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে– এই বিষয়গুলো নিয়ে যত্নশীল হয়ে কাজ করা দরকার।”

গুরনাহকে “বিশ্বের অন্যতম প্রথিতযশা উত্তর-উপনিবেশবাদী লেখক” হিসেবে উল্লেখ করে নোবেল কমিটি জানায়, তার গল্পের চরিত্রগুলো “নানা সংস্কৃতির মিলনস্থলে এসে পৌঁছে… যাপিত ও আগামী জীবনের মাঝে, বর্ণবাদ ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়; আবার বাস্তবতার সঙ্গে সংঘাত এড়াতে সত্য চাপা দিয়ে নিজেদের জীবনের গল্প পালটে ফেলতে বাধ্য হয়।”

আবদুলরাজাক গুরনাহর কয়েকটি বই

১৯৪৮ সালে তানজানিয়ার যানজিবারে আবদুলরাজাক গুরনাহ জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপদেশে আভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার কারণে তিনি বিশ বছর বয়সে শরণার্থী হিসেবে ব্রিটেনে পাড়ি জমান। যুক্তরাজ্যের ক্যান্টারবারিতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ কেন্ট-এর উত্তর-উপনিবেশবাদের এই অধ্যাপক সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। মাতৃভাষা সোয়াহিলি হলেও ইংরেজি ভাষায়ই সাহিত্যচর্চা করেন গুরনাহ। তার লেখা ১০টি উপন্যাসের মধ্যে ‘প্যারাডাইস’ ১৯৯৪ সালে বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পায়। আর ২০০১ সালে মনোনয়ন পায় ‘বাই দ্য সি’। ‘ডেজারশন’ তার আরো একটি আলোচিত উপন্যাস।

ডায়নামাইটের উদ্ভাবক সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুযায়ী ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে আসছে সুইডিশ একাডেমি। সে বছর ফরাসি সাহিত্যিক সুলি প্রুদহোম সাহিত্যে নোবেল জেতেন। গত বছর এই পুরস্কার পেয়েছিলেন মার্কিন কবি লুইস গ্লাক। আর ২০১৯ সালে জেতেন অস্ট্রিয়ান লেখক পিটার হ্যান্ডকি। অবশ্য ১৯৯০ সালের বালকান যুদ্ধে সার্বিয়ার প্রতি তার সমর্থন ছিলো, যার কারণে এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এমন আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ বিনোদন