ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং মারা গেছেন

সাইমন ড্রিং

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিশিষ্ট ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। সাইমনের সহকর্মী ও সুহৃদ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ আজ ২০ জুলাই দুপুরে তার ভেরিভাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে খবরটি জানিয়েছেন। সাইমন গত ১৬ জুলাই একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

তার জন্ম ১৯৪৫ সালে। সাংবাদিকতা শুরু করেন ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড নিউজপেপার-এ যোগ দেয়ার মাধ্যম। পরবর্তীতে তিনি সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, টেলিগ্রাফ ও  বিবিসির সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সাইমন ড্রিং ছিলেন একাধারে সংবাদদাতা, টেলিভিশন উপস্থাপক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা। সাইমন ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভি গড়ে তোলার প্রধান কারিগর। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এসে একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়। সাইমন ড্রিংয়ের ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাকে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য করে।

‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামের প্রতিবেদন

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ চালায়—সে খবর যেন কোনো বিদেশি সাংবাদিক সংগ্রহ করতে না পারে সেজন্য সাংবাদিকদের শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ২৬ মার্চ বিদেশি সাংবাদিকদের নিজ নিজ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাইমন হোটেলে লুকিয়ে থাকেন। পরে ২৭ মার্চ কারফিউ উঠে গেলে তিনি গোপনে ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ান এবং পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের প্রমাণ সংগ্রহ করেন। তারপর তিনি ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তার সাংবাদিকতা বাংলাদেশের স্বাধিকার সংগ্রামের পক্ষে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মুক্তিযোদ্ধা, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিদায় সাইমন ড্রিং। নিপিড়ীত মানুষের বন্ধু। বাংলাদেশ তোমায় কোনোদিন ভুলবে না।’

এটিএন বাংলার বার্তা প্রধান জ.ই. মামুন লিখেছেন, ‘বিদায় সাইমন ড্রিং, বাংলাদেশের জন্মের বন্ধু, আমার পিতার অধিক পিতা!…স্ত্রী ফিয়োনা, দুই জমজ কন্যা ইন্ডিয়া রোজ এবং আভা রোজকে রেখে চির বিদায় নিলেন সাইমন। তার মাধ্যমেই বিশ্ব প্রথম জানতে পারে ৭১-এর ২৫ মার্চে ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথা।
২০০০ সালে তার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় একুশে টেলিভিশন। তিনিই গড়ে তোলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের পেশাদার টিভি সাংবাদিকদের।
আমি জীবনে যে কজন মানুষের কাছে চিরঋণী, সাইমন ড্রিং তাদের অন্যতম। তার মৃত্যুশোক আমার কাছে পিতৃশোকের সমান। তার স্নেহ, ভালোবাসা এবং শিক্ষা আমি আজীবন মনে রাখবো।’

একাত্তর টিভির বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ লিখেছেন, ‘…সেই যৌবনে শুরু, জীবনের প্রায় পুরোটাই দিয়েছেন বাংলাদেশকেই! অথচ আমরা তাকে তার সম্মানটা দিতে পারি নাই—উল্টো অপদস্ত করেছি! বিদায় সাইমন ড্রিং! চির শান্তিতে ঘুমান!’

 

এমন আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ বিনোদন