স্থাপত্যের পথিকৃৎ ফজলুর রহমানকে নিয়ে তথ্যচিত্র

অনেকদিন থেকেই বাংলাদেশি-মার্কিন কিংবদন্তি স্থপতি ফজলুর রহমান খানের জীবন ও কর্ম নিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘রিচিং নিউ হাইটস : ফজলুর রহমান খান এন্ড দ্য স্কাইক্র্যাপার’ শিরোনামের তথ্যচিত্র। অবশেষে ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হলো এই চলচ্চিত্রের ট্রেলার।

বাংলাদেশের গর্ব ফজলুর রহমান খানকে নানা অভিধায় সম্বোধন করা হয়ে থাকে। তাকে বলা হয় ‘স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আইনস্টাইন’, কখনো বলা হয় ‘আধুনিক উঁচু ইমারতের জনক’। তার জন্ম ১৯২৯ সালের ৩ এপ্রিল, বাংলাদেশের ফরিদপুরে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ১০৮ তলা বিশিষ্ট সিয়ার্স টাওয়ার (বর্তমান নাম—উইলিস টাওয়ার) এবং ১০০ তলার জন হ্যানকক সেন্টারের নকশা করে পথিকৃতের মর্যাদা অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে সিয়ার্স টাওয়ারের কাজ শেষ হয়, তারপর টানা ২৫ বছর এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন।

ফজলুর রহমান খান

শুধু তাই নয় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সেসময় বাংলাদেশের সাহায্যার্থে শিকোগোতে ‘বাংলাদেশ ইমারজেন্সি ওয়েলফেয়ার আপিল’ নামে সংস্থা গঠন করেন। তিনি ১৯৮২ সালের ২৭ মার্চ শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে শিকাগোর গ্রেসল্যান্ড সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়।

সেই মানুষটির ওপর তৈরি হচ্ছে এই তথ্যচিত্র। ২০২১ সালে তথ্যচিত্রটির নির্মাণ শুরু করেন লায়লা কাজমি। সামনে আসা তিন মিনিট ১৫ সেকেন্ডের ট্রেলারে দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য লেখক ও স্থপতিদেরকে ফজলুর রহমান খান সম্পর্কে কথা বলতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে আছেন স্থাপত্যের অধ্যাপক ও ফজলুর রহমান খানের জীবনীকার ড. মীর এম. আলী, দুবাইয়ের বুরজ খলিফা ভবনের আর্কিটেকচারাল ইঞ্জিনিয়ার উইলিয়াম ব্যাকার, স্থপতি জন জিলস, লেখক ও ইতিহাসবিদ ড. অ্যামি ভাট প্রমুখ।

কিভাবে এই তথ্যচিত্র তৈরির কথা মাথায় এলো সেসম্পর্কে এফআরকে ডকুমেন্টারি ডটকম ওয়েবসাইটে লায়লা কাজমি বলেছেন, ‘‘তার (ফজলুর রহমান খান) সম্পর্কে যখন গভীরভাবে জানা শুরু করি, তখন তার উদ্ভাবন এবং তিনি যা রেখে গেছেন সেসবের প্রভাব আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। তখন আমার মনে হলো এই গল্প বিশ্ববাসীর জানা উচিত; স্থাপত্যকলা ও প্রকৌশলের বইয়ের পাতা থেকে যতটা জানা যায় তার চেয়ে বেশি করে।’’

তথ্যচিত্রটি যে বহু পুরোনো আলোকচিত্র, নকশা এবং ফজলুর রহমান খানের বিভিন্ন সময়ের অডিও-ভিডিওতে সমৃদ্ধ তা ট্রেলারটি দেখে বুঝা যায়। যেমন—ট্রেলারে শোনা যায় ফজলুর রহমান খানের কণ্ঠে ‘ফুল বলে ধন্য আমি’ রবীন্দ্রসংগীতটি।

সিয়ার্স টাওয়ার (উইলিস টাওয়ার)

চলচ্চিত্রটির প্রযোজক লায়লা কাজমির প্রতিষ্ঠান কাজবার মিডিয়া। সম্পাদনা করেছেন কাজমি নিজে। সংগীতে আছেন নৈনিতা দেশাই, সিনেমাটোগ্রাফিতে  রায়ান পার্সেল এবং এর শিল্প নির্দেশক বেগোনিয়া লোপেজ। চলচ্চিত্রটি কবে নাগাদ মুক্তি পাবে সেবিষয়ে এখনো জানানো হয়নি।

ফজলুর রহমান খান ১৯৪৪ সালে কলকাতার বালিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি কলকাতার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান বুয়েট) শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে স্কলারশিপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্কিডমুর-এ যোগ দেন।

জন হ্যানকক সেন্টার

ফজলুর রহমান খান ১৯৭২ সালে ‘কন্সট্রাকশন’স ম্যান অব দ্য ইয়ার’ খেতাব পান। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সর্বোচ্চ সন্মাননা অর্জন করেন। জেদ্দার হজ এয়ারপোর্ট টার্মিনাল নকশার জন্য ১৯৮৩ সালে (মরণোত্তর) আগা খান পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতা পদকে তিনি (মরণোত্তর) ভূষিত হন। ইলিনয়ের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ১৯৮৭ সালে ফজলুর রহমান খানকে (মরণোত্তর) ‘জন পারমার’ সম্মাননা প্রদান করে। তাছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়ে সম্মানিত করেছে। শিকাগোর ‘কাউন্সিল অন টল বিল্ডিংস এন্ড আরবান হ্যাবিট্যাট’ তার সম্মানে ‘ফজলুর রহমান আজীবন সম্মাননা’ প্রণয়ন করেছে।

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন