ক্র্যাক প্লাটুনের আজাদকে নিয়ে নাটক

ঢাকার ইস্কাটনের বিত্তশালী ইউনুস চৌধুরী ও সাফিয়া বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ। ইস্কাটনের রাজপ্রাসাদতুল্য বাড়িতে সুখেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু আজাদের বাবার দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্তে তাদের সুখের সংসারে ফাটল ধরে। সাফিয়া বেগম স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের জেরে ছেলে আজাদকে নিয়ে এক কাপড়ে ইস্কাটনের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। জুরাইনের এক খুপড়ি ঘরে অভাব অনটনে দিন কাটিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেন তিনি।

১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেন আজাদ। সেসময় দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু গেলে আজাদ বন্ধুদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দুর্ধর্ষ গেরিলা যোদ্ধাদের দল ‘ক্র্যাক প্লাটুন’-এর সদস্য ছিলেন আজাদ। তাদের এই গেরিলা দলটি সেসময় বেশকিছু গেরিলা অভিযান করে দুই নম্বর সেক্টরে পাকিস্তানি সেনাদের বুকে ভয় ধরিয়ে দেয়।

১৯৭১ সালের ২৯-৩০ আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায়। ৩০ আগস্ট রাতে জাহানারা ইমামের ছেলে রুমী, আবু বকর, আজাদসহ অনেককে রাজাকারদের সহযোগিতায় ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া ড্রাম ফ্যাক্টরির কাছে এমপি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে তাদের রেখে অমানবিক নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনারা।

নির্যাতন কেন্দ্রে আজাদের মাকে আনা হয়। মাকে সব নির্যাতনের কথা জানায় আজাদ। কিন্তু মা সাফিয়া বেগম আজাদকে বললেন, “বাবারে, যখন মারবে, তুমি শক্ত হয়ে থেকো। সহ্য করো। কারো নাম যেনো বলে দিও না।” এরপর আজাদ বলে, ভাত খাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে। পরদিন মা ভাত নিয়ে ছেলেকে দেখতে যান, কিন্তু তার আজাদের সঙ্গে আর কখনো দেখা হয় না।

তারপর দেশ স্বাধীন হয় কিন্তু আজাদ এবং তার বন্ধুরা আর ফেরে না। সাফিয়া বেগম দেশ স্বাধীন হবার পর ১৩ বছর বেঁচে ছিলেন। এই ১৩ বছর তিনি ভাত খাননি, ছেলেকে ভাত খাওয়াতে না পারার কষ্টে। এই বেদনাবিধুর কাহিনী অবলম্বনে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক লিখেন তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘মা’।

১৯৮৫ সালের ৩০ শে আগস্ট শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আজাদের মা। মারা যাওয়ার আগে তিনি বলে গিয়েছিলেন, তার কবরের ফলকে পরিচয় হিসেবে লিখতে ‘শহীদ আজাদের মা’। তাই আজও জুরাইনে তার কবরে লেখা ‘মোসা. সাফিয়া বেগম, শহীদ আজাদের মা’।

শহীদ মাগফার চৌধুরী আজাদের জীবনের ঘটনা অবলম্বনে নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দার নির্মাণ করছেন নাটক ‘নিহত নক্ষত্র’। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আরটিভিতে প্রচারিত হবে নাটকটি। আজাদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব।

এমন আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ বিনোদন