শরবত গুলার কথা মনে আছে? ওই যে যার ছবি ছাপা হয়েছিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে? তখন তার বয়স ১২। তার ভীত-সন্ত্রস্ত—কিন্তু তীক্ষ্ণ সবুজ চোখ দুটি আলোড়ন তৈরি করেছিল আশির দশকে। ‘আফগান গার্ল’ হিসেবে বিখ্যাত সেই ছবিটি তুলেছিলেন প্রখ্যাত মার্কিন আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি। এবার সেই শরবত গুলার ঠাঁই হলো ইতালিতে।
গত ২৫ নভেম্বর ইতালি সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শরবত গুলা রোমে পৌঁছেছেন। আফগানিস্তান আবারো তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর থেকে শরবত গুলার দেশটিতে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছিল। গুলা তাকে উদ্ধারের আহ্বানও জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে ইতালি সরকার আফগানিস্তানের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার সহযোগিতায় গুলাকে আফগানিস্তানের বাইরে নিতে সক্ষম হলো।
১৯৮৪ সালে স্টিভ ম্যাককারি যখন গুলার ছবি তুলেছিলেন তখনো গুলা শরণার্থী। জন্মভূমি আফগানিস্তান ছেড়ে তাকে পাকিস্তানে পাড়ি জমাতে হয়েছিল। পেশওয়ারের একটি শরণার্থী শিবিরে এই আফগান কন্যার মুখোমুখি হন ম্যাককারি। গুলার ছবি তাকে এনে দেয় বিপুল খ্যাতি। গুলাও হয়ে ওঠেন শরণার্থী-প্রতীক। রাতারাতি তিনিও বিশ্বখ্যাত হয়ে যান।
নকল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের অভিযোগে ২০১৬ সালে পাকিস্তানে গুলা গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং জেল খেটেছিলেন। একই বছর আফগানিস্তানের তখনকার প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি গুলাকে সম্মানের সঙ্গে আফগানিস্তানে ফিরিয়ে আনেন একং পুনর্বাসিত করেন। ৩০ বছর পর আবারো শরবত গুলাকে বাস্তুচ্যুত হতে হলো।
তবে এবার তার পাশে আছে ইতালি সরকার। গুলার বিষয়ে ইতালি সরকারের আন্তরিকতায় আবেগ-আপ্লুত আলোকচিত্রী ম্যাককারি। তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘…আফগান শরণার্থীদের প্রতীক শরবত গুলাকে আমরা নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ইতালি সরকারের আন্তরিকতায় কৃতজ্ঞ।’
১৯৮৪ সালে শরবত গুলার ছবি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও—তার পরিচয় তখন অজানা ছিল। ২০০২ সালের অনুসন্ধানে জানা যায় তার পরিচয়। শরবত গুলার বর্তমান বয়স ৪৯। তার স্বামী মারা গেছেন। তিনি চার সন্তানের মা।