প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্য ও প্রাচ্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাসাবাড়ি পর্যন্ত সবখানেই মেঝেতে মোজাইকের বেশ প্রাধান্য ছিলো। এতে থাকতো পৌরাণিক ছবি, নাহয় জ্যামিতিক নানা অলঙ্করণ। ইতালি বা তুরস্কের মতো অনেক দেশেই মাটি খুঁড়তে গিয়ে এমন শিল্পকর্ম পাওয়া যায়। ২০১০ সালে তুরস্কের আন্টাকিয়ায় এক হোটেলের ভিত্তি নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়িতে বেরিয়ে আসে এমনই এক মোজাইক। তবে এর বিশেষত্ব হলো, এটি এযাবত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় প্রাচীন মোজাইক।
ধারণা করা হয়, ৯ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই মোজাইকটি প্রাচীন আন্টিওকের কোনো রাষ্ট্রীয় ভবনের মেঝের অংশবিশেষ। এতে হাজার হাজার ছোট পাথরখণ্ড দিয়ে সূক্ষ্ম সব ছবি ও জ্যামিতিক অলঙ্করণ চিত্রায়িত হয়েছে। গ্রিক দিগ্বিজয়ী অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাপতি প্রথম সেলিউকাস হলেন ব্যবসায়িক অঞ্চল আন্টিওকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ৩১২ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ২৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বর্তমান ইরাক ও সিরিয়ার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ব্যাবিলনিয়া রাজ্য শাসন করেন। তখন থেকে ১৫শ বছর ধরে অন্তত ৩০০ সভ্যতার অবদানে নির্মিত হয়েছে এই মোজাইকটি।
মোজাইক শিল্পের বিকাশের পুরোটা সময় ধরেই আন্টিওক কখনো স্যাসানিয়ান, কখনো রাশিদুন খিলাফত আর কখনো বাইজ্যান্টাইন শাসনের অধীনে ছিলো। তবে এই মোজাইকটি অবশ্যই ৫২৬ খ্রিস্টাব্দের আগে তৈরি, কারণ এতে ওই সময়কার দুটি ভূমিকম্পের প্রভাব স্পষ্ট। তবে মোজাইকটির বেশিরভাগ অংশই অক্ষত অবস্থায় আছে। ফলে এখানে হোটেল হয়তো বানানো যাচ্ছে না, বরং তাতে লাভই হয়েছে – এটি হয়ে গেছে জাদুঘর হোটেল। এই জাদুঘরের সুউচ্চ আধুনিক ভবনটি নির্মাণে স্থপতিদের সঙ্গে কাজ করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরাও। এতে প্রাচীন এই মোজাইকটি শুধু সংরক্ষিতই থাকছে না, হোটেলের অতিথিরাও ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
তবে এই মোজাইকটিই এই হোটেলের একমাত্র আকর্ষণ নয়। বিশেষ ধরনের জানালার মধ্য দিয়ে এখান থেকে ক্রুসাডারদের নির্মিত গুহাগীর্জা সেন্ট পিয়ের-ও বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়।