বরেণ্য গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর আর নেই। কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরটি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ফকির আলমগীরের ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব। আজ ২৪ জুলাই রাত ১১টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফকির আলমগীরের মৃত্যু ঘোষণা করে। তার মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গত ১৫ জুলাই ফকির আলমগীরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে তিনি বেশ কিছুদিন ধরে জ্বর ও কাশিতে ভুগছিলেন। পরীক্ষায় তার করোনা ধরা পড়ে। এরপর তার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। তারপর তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। ফকির আলমগীরের ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব ১৮ জুলাই রাতে জানিয়েছিলেন, ফকির আলমগীরকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের বিনোদন জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মুক্তিযোদ্ধা, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ফকির আলমগীরের সাথে রাজপথের আন্দোলনে একসাথে পথচলার নিরবিচ্ছিন্ন ৫২ বছর অন্তে তার বিচ্ছেদে আমি শোকাহত। বিমর্ষ।’
ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন লিখেছেন, ‘তোমার অনন্তযাত্রা শান্তিময় হোক হে প্রিয় শিল্পী। গণমানুষের শিল্পী বলতে তুমিই ছিলে আমাদের একমাত্র আইকন। আমরা তোমাকে ভুলবো না ভাইডি…’
নন্দিত উপস্থাপক হানিফ সংকেত তার ভেরিফাইড পেজে লিখেছেন, ‘মানবিক গুণাবলিতে মহান এই শিল্পীর অকস্মাৎ মৃত্যু সংবাদে স্বজন হারানোর কষ্ট অনুভব করছি। সম্প্রতি তার অসুস্থতার খবরে বেশ শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।…আমি তার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
প্রবাসী লেখক তসলিমা নাসরিন ফকির আলমগীরকে লাল সালাম জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ফকির আলমগীর নেই, কোভিড তাকেও নিয়ে গেল! এমন প্রাণচঞ্চল মানুষ সংসারে খুব একটা মেলে না। যখনই দেখেছি তাকে, অনর্গল কথা বলতে দেখেছি, প্রাণ খুলে হাসতে দেখেছি, নতুন গান নিয়ে মগ্ন হয়ে যেতে দেখেছি।…দুঃখী দরিদ্রদের নিয়ে গান বেঁধেছেন চিরকাল। শ্রমজীবী মানুষের জন্য উদাত্তকণ্ঠে গণসংগীত গেয়েছেন। মানুষটিকে লাল সালাম।’
গীতিকার কবির বকুল লিখেছেন, ‘সবসময় দোয়া করেছি, আপনি যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু লাল ভাই, আপনি আর এলেন না। আমি কাকে ‘‘লাল ভাই’’ বলে ডাকব! ওপারে ভালো থাকবেন লাল ভাই।’
ফকির আলমগীর গণসংগীত ও আধুনিক গান ছাড়াও পাশ্চাত্য সংগীতও করেছেন। তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে যোগ দেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর তিনি প্রতিষ্ঠাতা। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয়পটে’ ইত্যাদি তার লেখা গ্রন্থ।