এতটা নেশা এ জীবনে আসে নাই

টানা তিন ঘণ্টা একদম মন্ত্রমুগ্ধের মতন বসেছিলাম স্ক্রিনের সামনে। কি দেখলাম এতক্ষন! যা দেখেছি তাতো আমার দেখা বাস্তব!

বাংলাদেশের যেসব হাতেগোনা লেখক আদালতে দাঁড়িয়েছেন, একটা বিচার প্রক্রিয়া কতোভাবে হয় সেই অভিজ্ঞতা যাদের আছে তাদের একজন হিসেবে আমি বলতে পারি—এই সিরিজের প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি চরিত্রের সাথে আমি নিজেকে মেলাতে পেরেছি। আবীর চৌধুরী নামের যে ভিক্টিম, আফনান চৌধুরীর মতো অপরাধ করেও হম্বিতম্বি করা চরিত্রটা,  এসআই মলয় নামের অসম্ভব দুর্দান্ত অভিনয় করা চরিত্রটা আমাকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে নিজের কথা, আমার দেখা আইন আদালতের কথা!

তিনটা ঘণ্টা আমি ফোন আসলে না ধরতে পেরেছি, না কিছু করতে পেরেছি, না মুখে কিছু তুলতে পেরেছি! একটা ঘটনার সাথে সাথে হাঁটলাম, দৌড়ালাম, মনে মনে ভাবলাম আমার পলাতক দিনগুলির কথা!  আমার আর মাথায় কিছুই ছিল না। আসলেই কি দেখলাম এতক্ষণ?

হইচই থেকে দেখা এই ওয়েব সিরিজের নাম ‘মহানগর’। বানিয়েছেন আশফাক নিপুণ। আশফাক নিপুণকে নিয়ে আমার যা বলার আছে, সেটা হলো তার রাজনৈতিক সচেতনতা। এই ভদ্রলোক বাকস্বাধীনতার বিষয়ে যতটুকু সোচ্চার তা কেবল তার মুখে না, নিজের বানানো সিরিজে, জীবনে, সবখানে! এইটা গেলো তার প্রতি আমার ব্যক্তিগত ভালো লাগা।এইদিকে ডিরেক্টর হিসেবে তিনি কেমন তা বলি। ওসি হারুন চরিত্রে মোশাররফ করিম সম্ভবত একজনই। তাকে দিয়ে এতো দারুণ চিত্রায়ণ কি আর কোনো ডিরেক্টর করেছেন? আমার মনে হয় না।
নাইলে এত নিখুঁত অভিনয় কেউ কি করে? মোশাররফ করিমের জীবনের সম্ভবত সেরা অভিনয়টা তন্ময় হয়ে দেখছিলাম, মনে হচ্ছিল অনুরাগ কাশ্যপের ‘স্যাক্রেড গেমস’-এর পারুলকার চরিত্রের বাংলাদেশ ভার্সনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি!রিচ কিড, টাকাওয়ালা আর আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানো আফনান চৌধুরী চরিত্রের শ্যামল মওলা সম্ভবত এই সিরিজের মাধ্যমে নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন। খায়রুল বাশার,  নিশাত প্রিয়ম নিজেদের জায়গায় দারুণ। এসআই মলয় চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তার নাম জানি না। কিন্তু আমার অসম্ভব  মুগ্ধতা ছিলো তাকে নিয়ে। শুধু যেটুকু ভালো লাগেনি তা হলো—মম আর আবীর চৌধুরীর ভালেবাসার মেয়েটির প্লাস্টিকের মতো অভিনয়।যতটা উদ্বেগ নিয়ে একটা ওয়েব সিরিজ দেখেছি, এতটা নেশা এ জীবনে আসে নাই কখনো বাংলাদেশের কোনো ওয়েব সিরিজ দেখে। আমার সব কাজ বন্ধ ছিল। এটা দেখতে বসে আমি এক সেকেন্ড উঠতে পারি নাই, এক কাপ চা বানাতে গিয়ে তিনবার মনে হয়েছে—এরপর কি হবে?স্যালুট আশফাক নিপুণ! গল্প বলায়, শিল্পী নির্বাচনে আপনি সেরাদের কাতারে। আমাদের দেশে পাশের দেশের অনুরাগ কাশ্যপের মতো ডিরেক্টর নাই বলে মন খারাপ হতো। আপনি সেই মন খারাপ ভুলিয়ে দিয়েছেন!
আগামী সিজনের অপেক্ষা করবো যতক্ষণ বেঁচে আছি। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন আর লেখক হিসেবে চাইবো—বাক স্বাধীনতার জয় হোক!

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন