সারা ফ্যায়রুজ যাইমা এখন ডিজিটাল মিডিয়া জগতের পরিচিত মুখ। চ্যানেল টুয়েন্টিফোর দিয়ে পেশাগত যাত্রা শুরু। তারপর রিপোর্টিংও করেছেন অনেকদিন। এখন আছেন প্রথম আলোয়। প্রথম আলোর ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোতে সফলতার সঙ্গে প্রযোজনার কাজ করে যাচ্ছেন, পাশাপাশি উপস্থাপনা তো করছেনই। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় মৌসুমী হক আয়েশা ।
প্রশ্ন: নিউজ প্রেজেন্টর ও ডেস্ক রিপোর্ট দিয়ে শুরু করেছিলেন? পরে শুধু উপস্থাপনাকে বেছে নিলেন কেন?
সারা: আমি কখনো ভাবিনি আমি নিউজ প্রেজেন্টেশন শুরু করবো। সবে মাত্র ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ার শেষ করেছি—এমন সময় ইউনিভার্সিটি থেকে একটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলাম ‘ক্লেমন ইউনি ক্রিকেট’। সেখানেই ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্ট হিসেবে রাখা হচ্ছিল। ওখানেই হুট করে খেলার আগের দিন আমার বন্ধুরা বললো, তুমি তো অনেক ভালো কথা বলতে পারো। তুমি অংশগ্রহণ করো হোস্ট হিসেবে, স্ক্রিনটেস্ট দাও। এর আগে কখনোই আমার উপস্থাপনা করা হয়নি। সেভাবেই স্ক্রিনটেস্ট দেই। আগের রাতে স্ক্রিনটেস্ট পরদিন সকাল থেকে গাজি টিভিতে টানা এক সপ্তাহ লাইভের কাজ চলেছিল।
পরবর্তীতে ওইখান থেকেই চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের যিনি স্পোর্টস এডিটর আছেন তিনি আমাকে দেখে বলেন, আমি নিউজ পড়তে চাই কিনা এবং আমি যেন অডিশন দিতে যাই।
যদিও শুরুতে আমার আগ্রহ এতোটা ছিল না। ইউনিভার্সিটিতে সবে মাত্র এডমিশন নিয়েছি। তখন নিউজ করব বা উপস্থাপনায় আসব তা নিয়ে ইচ্ছে কাজ করছিল না।
তবে বেশকিছু দিন পর চ্যানেল টুয়েন্টিফোর থেকে আমাকে ফোন করা হয় অডিশন দেয়ার জন্য। পরে মায়ের অনুপ্রেরণায় আমি দেখা করি। সেই সময় সেখানে একটা কর্মশালা চলছিল, আমিও সেখানে যুক্ত হই, স্ক্রিনটেস্ট দিতে হয় কয়েকবার। সাত দিন কর্মশালা করার পর ফাইনালি আমিই সিলেক্ট হই। সেটাও শুধুমাত্র স্পোর্টস নিউজের জন্য। সেখান থেকে ডেস্ক রিপোর্ট, স্পোর্টস নিউজ টানা এক বছর। আমার শুরুটা এমনই ছিল। রিপোর্টিংটাই আমার শখের ছিল, ছোট বেলা থেকেই আসলে সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছে ছিল।
প্রশ্ন: আপনি ক্রাইম শোও হোস্ট করেছেন, এখনো সেই দিনগুলো মিস করেন?
সারা: হ্যাঁ, আমি সব থেকে বেশি মিস করি। কারণ এটা বলতে গেলে আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার ছিল। যদিও সব কিছুই চ্যালেঞ্জিং, রাত করে শুটিং হতো, কখনো মধ্যরাত থেকে মাঝরাত পর্যন্ত। সব থেকে বেশি মনে পরে যেদিন ইটের ভাটায় শুট ছিল। প্রচণ্ড রোদ, সেই সাথে ইটের ভাটার অসহ্য গরমে আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে শুট করতে হয়েছিল। সেটা বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল।
প্রশ্ন: আপনি টেলিভিশনের মানুষ। এখন অনলাইন প্লাটফর্মে কাজ করছেন, কাজের কোনো পার্থক্য দেখেন?
সারা: পার্থক্য তো অবশ্যই আছে। টেলিভিশনের ব্রডকাস্টিং সিস্টেমটা অনেকটা বড়। অনেকগুলো ভাগ আছে, সেই তুলনায় অনলাইনে ব্রডকাস্টিংয়ের পার্টটা অনেক ছোট। তবে এখানে চ্যালেঞ্জটা বেশি। ছোট জায়গা হলেও কাজটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে করতে হয়। যেহেতু এটা ‘প্রথম আলো’ পিছিয়ে থাকার উপায় নেই। চ্যালেঞ্জটা বেশিই নিতে হয়।
প্রশ্ন: যারা নতুন, আপনার মতো উপস্থাপনা করতে চান—তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
সারা: যেকোনো একজনকে নয়, কয়েকজনকে অনুসরণ করতে হবে। একেকজনের উপস্থাপনার ধরণ একেক রকম। আমি যখন ক্রাইম শো হোস্ট করেছি তখন আমার কথা বলার ধরণ ছিল আলাদা। যখন স্পোর্টস হোস্ট করতাম তখন ভয়েস টেম্পো ছিল আলাদা, এক্সপ্রেশনগুলো আলাদা। আমার মতে নতুনদের জন্য পরামর্শ থাকবে প্রচুর বই পড়তে হবে। যে বিষয়ের উপর উপস্থাপনা করতে হবে সেই টপিক সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকতে হবে। শুদ্ধ বাংলা চর্চা করতে হবে। কথা বলার সময় বাংলায় বললে সম্পূর্ণ বাংলা অথবা সম্পূর্ণ ইংরেজিতে বলার চেষ্টা করতে হবে।
অবশ্যই প্রেজেন্টেবল হতে হবে। প্রেজেন্টেবল বলতে—আমি বুঝানোর চেষ্টা করছি, শুধুমাত্র চেহারার সৌন্দর্য নয়, অনুষ্ঠানের সাথে আমার সবকিছু সামঞ্জস্যপূর্ণ আছে কিনা সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। আমি কোন পোশাক পড়লাম, কতোটা মেক–আপ ব্যবহার করলাম…।
প্রশ্ন: কিভাবে শুরু করবে তারা?
সারা: শুরুতে আমি যা বলেছিলাম প্রচুর বই পড়তে হবে। নতুন নতুন শব্দ জানতে হবে এবং তার অর্থ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চর্চা করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: উচ্চারণ ও এক্সপ্রেশন কতোটা জরুরি?
সারা: উপস্থাপনার ক্ষেত্রে উচ্চারণটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চারণের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা সকলেরই থাকে। তবে শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চা করতে হবে। আর উপস্থাপনায়—আমার কাছে মনে হয় এক্সপ্রেশনটা অনেক জরুরি। আসলে এক্সপ্রেশনটা প্রোগ্রামের ভাবমূর্তি ধরে রাখে। যে ধরনের প্রোগাম সে ধরনের ভাবমূর্তিটা ধরে রাখার জন্য সঠিক এক্সপ্রেশন থাকা জরুরি।
প্রশ্ন: এই কাজ করলে ভবিষ্যৎ কেমন?
সারা: ভবিষ্যৎ বলাটা আসলে অনেক কঠিন। অনেকেই তো বেশ ভালো করছে। শুধু উপস্থাপনার ক্ষেত্রে নয়—যেকোনো পেশার ক্ষেত্রেই আমি বলবো যে, যেই কাজটা করছেন সেটা সঠিকভাবে ভালোবেসে করতে হবে। তাহলে যেকোনো কাজই ভালো করে করা সম্ভব।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে আপনাকে অন্যকোনো মাধ্যম, নাটক–সিনেমায় দেখতে পাব?
সারা: এখন পর্যন্ত নাটক বা সিনেমা করার ইচ্ছে নেই। তবে মাঝে মধ্যে টিভিসি করতে ইচ্ছে করে, দেখে ভালো লাগে শুধু এজন্যই। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রেজেনটেশনটা শখের এবং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বা প্রযোজনা—বর্তমান আমি তাই, এই পেশাটা সম্পর্কে জানা ও বুঝার অনেক বাকি আছে। এটাকে ভালোভাবে রপ্ত করার ইচ্ছে।
প্রশ্ন: উপস্থাপনায় ডায়েট কতোটা জরুরি? আপনার রুটিন কি?
সারা: উপস্থাপনায় ডায়েট বলে ওভাবে কিছু হয় না। তবে উপস্থাপনাটা করার জন্য ফিট থাকাটা জরুরি। যেটা আমি শুরুতে বলেছিলাম প্রেজেনটেবল হতে হবে। স্ক্রিনে আমাকে যেমনটা উপস্থাপন করলে ভালো লাগবে—তেমনটা হওয়া ভালো।
আসলে আমার রুটিন বলতে তেমন আলাদা কিছু নেই। আমি আসলে কড়া ডায়েট মেইনটেইন করি না। আমি অনেক ফুডি, পিৎজা, বার্গার ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খেতে খুব পছন্দ করি। ঝালমুড়ি, ফুস্কা অনেক ভালো লাগে। সুযোগ পেলেই খাওয়া হয়। দিনের মধ্যে চা-কফি ছাড়া আমার একেবারেই চলে না। স্পেশালি আমি খুব কফি খোর। তবে কফিতে চিনি খাই না (হেসে)।
রাতের বেলায় ভাতটা এভোয়েড করি। রেগুলার জিম করি। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে জিমে যাওয়া আপতত বন্ধ। সুযোগ পেলেই বাসায় কিছু এক্সারসাইজ করা হয়।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
সারা: ভবিষ্যৎ তো অনেক দূরে, তবে হ্যাঁ, অবশ্যই নিজেকে এমন কোথাও দেখতে চাই—যেখানে আমার নাম শুনলে আরেকজন মানুষ বলতে পারে, ‘সারা ফ্যায়রুজ যাইমা ? চিনি তো !!’