সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব আর গুণ -এই তিনের দারুণ এক সম্মিলনে পরিপূর্ণ ছিলেন কানন দেবী। তাঁকে বলা হয় ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম নায়িকা। শুধু তাই নয়, বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁকেই প্রথম তারকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রথম ‘ব্র্যান্ডেড’ নায়িকা কানন দেবী। এমনও বলেন কেউ কেউ ; সুচিত্রা সেনের আগের ‘সুচিত্রা’ কানন দেবী। যদিও দু’জনের যাপিত জীবন, পারিবারিক অবস্থা কোন কিছুরই মিল নেই। সূচিত্রা সেন তারকা পরিচিতি থেকে কোনো দিনই বেরোননি। তৎকালীন ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই সুচিত্রা সেনের সান্নিধ্য পাননি।
পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেনের পরিবার অবস্থাপন্ন, শিক্ষিত, তাঁর বেড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত বাঙালি স্টাইলে, উচ্চবিত্ত পরিবারে বিয়ে, কিন্তু একেবারে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিনেমায় এসেছিলেন। অপরদিকে কানন দেবীর গল্পটা অন্য রকম। তাঁকে বলা হতো ইন্ডাস্ট্রির জননী। নায়িকা, গায়িকা, প্রযোজক, অভিভাবক কত কী!
কানন দেবীর জন্ম ১৯১৬ সালের ২২শে এপ্রিল হাওড়ায়। আত্মজীবনী ‘সবারে আমি নমি’তে অনেক কথা বলে গেছেন তিনি। তাঁকে নিয়েও অনেক গল্প প্রচলিত।
১৯৩৫ সালে ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠিত করেন কানন দেবী। এরপর ১৯৩৭ সালে ‘মুক্তি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সফলতার সিঁড়িতে পা রাখেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ‘শ্রীমতি পিকচার্স’ নামে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও চালু করেন। এছাড়া তিনি নিজে পরিচালনার কাজও করেছেন। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ৭০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন কানন দেবী।
সংগীত শিল্পী হিসেবেও নাম ছিল তাঁর। আধুনিক গান ও রবীন্দ্রসঙ্গীতে কানন দেবীর অসাধারণ দখল ছিল। এছাড়া অসংখ্য সিনেমায় তিনি প্লেব্যাক করেছেন।
শেষ জীবনে তিনি সেবামূলক কাজে এগিয়ে আসেন। অবশ্য দুস্থ বয়স্ক শিল্পীদের সাহায্যের জন্য তিনি সব সময় সক্রিয় ছিলেন। নীরবেই সেসব কাজ করতেন তিনি। ১৯৯২ সালে ১৭ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বেলবিউ ক্লিনিকের এক নির্জন কেবিন থেকে প্রায় চুপি চুপি পাড়ি দেন অন্ততের পথে।
তথ্য সূত্র : প্রথম আলো