কানাডার রিয়েল এস্টেট হালচাল : বাড়ীর দাম কমছে ?

সামগ্রিক বিবেচনায় কানাডার হাউজিং মার্কেটে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটা বিপরীতমূখী স্রোত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাস দুয়েক আগেও প্রোপার্টি মার্কেটে আসা মাত্র ক্রেতাদের হুমড়ি খেয়ে পড়ার দৃশ্য ছিল নৈমিত্তিক বিষয়। আচমকা দাম হাঁকিয়ে লিস্টিং করা কিংবা আস্কিং প্রাইসের অনেক উপরে ডজন ডজন অফার জমা পড়া যেখানে ছিল নিত্যকার চালচিত্র, সেখানে এখন পরিমিতি তথা সংযম ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
২০১৮/২০১৯ এর পর থেকে ক্রমবর্ধমান রিয়েল এস্টেট প্রাইসে হাওয়া লাগায় করোনাকালীন ইন্টারেস্ট রেট। ১.২%-১.৪% ইন্টারেস্ট রেটের সুবিধা নিয়ে পুরাতন বাড়ী রি-ফাইন্যান্স করে নতুন পারচেজের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠা ক্রেতাদের চাপে কার্যতঃ ‘মার্কেট আউট’ ছিলেন ৫-১৫% ডাউনপেমেন্ট নিয়ে ভালো চাকুরিধারী অপেক্ষমান নতুন ক্রেতারা। হলিডে পিরিয়ড শেষে ইন্টারেস্ট রেট এখন স্বাভাবিক তথা ঐতিহাসিক এভারেজ পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে। ফলে প্রফেশনাল ইনভেস্টররা আপাতত রিয়েল এস্টেট থেকে বিরত থেকে স্টক মার্কেট, বন্ড কিংবা ‘জিআইসি’ কে টার্গেট করছেন। ফলে অনেকটা স্বাভাবিক ধারায় ফিরছে বাড়ি-ঘরের মার্কেট। সুযোগ আসছে প্রথমবারের মত বাড়ি কেনায় প্রত্যাশীদের।

হাউজিং মার্কেটের বিপরীতমূখী এ স্রোত সব প্রদেশ কিংবা শহরে সমান তালে যাচ্ছেনা। স্বাভাবিক কারণেই কানাডার মূল দুই ‘হট’ মার্কেট গ্রেটার টরন্টো এবং ব্যাংকুয়েভারে এই প্রবণতাটা চোখে পড়ার মত। এদিকে অটোয়া মার্কেটেও পরিবর্তনের আবাস পাওয়া যাচ্ছে। কানাডার অন্য ‘হট’ মার্কেটগুলির তুলনায় মন্ট্রিয়েল তথা কুইবেকে রিয়েল এস্টেটের এপ্রিসিয়েশন ছিল অনেক কম। আপাতঃ বিপরীতমূখী স্রোতটাও তাই অনেকটা ধীর ও মিশ্র। ‘সিঙ্গেল ডিটাচ্ড’ বাড়ী কিংবা কন্ডো মার্কেটে সেরকম কোন প্রভাব এখনো পড়েনি। কার্যতঃ এখানে আস্কিং প্রাইসে সঙ্গতি, মাল্টিপল অফারের সংখ্যা আগের তুলনায় কম সেই সাথে ‘বাজারে তালিকাভুক্ত দিন’ বেড়ে যাওয়ার চেয়ে বেশী কিছু এখনো হয়নি। ফলে আগে যারা অফার দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় টিকতে পারেননি, তারা একটু সুযোগ পাচ্ছেন। তবে গ্রেটার মন্ট্রিয়েল এবং আশপাশের প্রপার্টি গুলিতে ডুপ্লেক্স/ট্রিপ্লেক্স এর চেয়ে বেশী ইউনিটের প্রপার্টি গুলিতে ক্রেতাদের ভিজিট রিকোয়েস্ট উল্লেখযোগ্য পরিমানে কমে গেছে। অপরদিকে দীর্ঘ দিন পর ক্যালগারিতে হাউজিং বুম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রাইস এবং বিক্রয় সংখ্যা উভয় দিক দিয়েই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে গত দুই মাসে। আলবার্টামুখী নতুন ইমিগ্রান্টের চাপ সেই সাথে অন্টারিও রিয়েল এস্টেটে থেকে অর্জিত ইক্যুইটি ক্যালগারিতে ট্রান্সফার হচ্ছে এমন মতামত বিশেষজ্ঞদের।
ইন্টারেস্ট রেট নিকট অতীতের প্রায় দ্বিগুণ। সামনে আরো বাড়বে। বছরের শেষ দিকে হয়তো এমন পর্যায়ে যাবে যা মাস ছয়েক আগে ছিল কল্পনাতীত। তাই বলে এটাকে অস্বাভাবিক বলার কোন সুযোগ নেই। এটাই বরং স্বাভাবিক কিংবা ঐতিহাসিক গড় রেটের চেয়ে কম। ইনভেস্টররা তাদের রেট অফ রিটার্ন দেখে ইনভেস্ট করবেন এটাই স্বাভাবিক। যেখানে সুযোগ নেই বসবাসের জন্য যারা বাড়ী খুঁজছেন তাদের। ফলে পাবলিক ট্রেন্ড এখন সিঙ্গেল ডুয়েলিং হাউজ এবং কন্ডোর দিকে।
মার্কেটে বাড়ির যে সরবরাহ তার চেয়ে চাহিদা অনেক বেশী। ফলে ইন্টারেস্টে রেটের যে চাপ, সেটা রেভেন্যু প্রপার্টির উপর সাময়িক প্রভাব রাখলেও, বসবাসের জন্য যারা বাড়ী খুঁজছেন তাদের ক্ষেত্রে তা অচিরেই সয়ে যাবে। কোভিড পরবর্তী নতুন ইমিগ্রেশন এবং ইমিগ্রেশন পরবর্তী রেন্টাল চাপের কারনে হাউজিং মার্কেটের বিরাজমান অবস্থায় রাতারাতি পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। শুধুমাত্র ফ্লিপিং এর উদ্দেশ্যে এ মুহূর্তে কুইবেকে যারা শর্ট -টার্ম উচ্চ সুদে বাড়ী কিনছেন বিভিন্ন কারণে তাদের পরিকল্পনা হয়তো বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। বসতের জন্য বাড়ী কেনায় কখনো ঝুঁকি ছিল না, এখনও নাই।

লেখক: প্রকৌশলী রিয়েল্টর শিহাব উদ্দিন
(৫১৪) ৩৬৮-৯০০০, realtor.shihab@gmail.com

 

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন