গত ৭ এপ্রিল হাউজ অব কমন্স-এ উত্থাপিত হলো নতুন মেয়াদে লিবারেল সরকারের প্রথম বাজেট। সরবরাহের অভাব এবং আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন কারণে অস্থির হাউজিং মার্কেট প্রশমনে বাজেটে কি পদক্ষেপ থাকছে এ নিয়ে ছিল বেশ কৌতূহল। কানাডা “আবাসন ঘাটতির” মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, অকপটে স্বীকার করে বাজেট বক্তৃতায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রায় সবকটি বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিনা ফ্রিল্যান্ড। ক্রমবর্ধমান হাউজিং সংকট সমাধানে বাজেটে রয়েছে চাহিদা ও সরবরাহ বৃদ্ধির বেশকিছু স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ।
মার্কেটে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে নতুন বাজেটে রয়েছে প্রণোদনা। সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য বাজেটে ১০ বিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে যাতে নতুন কনস্ট্রাকশন দ্বিগুণ হয়। এর ফলে বছরে দুই লাখ নতুন বাড়ির পরিবর্তে চার লাখ বাড়ি মার্কেটে আসবে। প্রতিশ্রুত এই অর্থের মধ্যে ৪ বিলিয়ন ‘সিএমএইচসি’র হাউজিং এক্সেলারেটর ফান্ড-এর মাধ্যমে নতুন ইউনিট নির্মাণ এবং শূন্য দশমিক পাঁচ বিলিয়ন কো-অপারেটিভ সম্প্রসারণে ব্যয় হবে। এর বাইরে সাশ্রয়ী ইউনিট নির্মাণে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন এবং পরিত্যক্ত ইউনিট মেরামতে তিন বিলিয়ন ব্যয় করা হবে।
এছাড়া কানাডিয়ানদের জন্য বাড়ি সরবরাহ নিশ্চিত রাখার লক্ষ্যে বিদেশিদের জন্য রেসিডেন্সিয়াল প্রপার্টিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সিটিজেন ও পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট ছাড়া অন্য বায়ারদের রিয়েল এস্টেট মার্কেটে বিনিয়োগের ওপর বহুল প্রতীক্ষিত এ নিষেধাজ্ঞা আপাতত দুই বছরের জন্য বহাল থাকবে । তবে রেফিউজি, ওয়ার্ক পারমিটধারী এবং ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টেরা এই নীতির বাইরে থাকবেন। উল্লেখ্য, রিক্রিয়েশনাল প্রোপার্টি, যেমন কটেজ, ক্যাবিন ও অন্যান্য ভ্যাকেশন হোমগুলোও এই বিধিনিষেধের আওতাধীন নয়।
সম্ভাব্য তরুণ ক্রেতাদের প্রথম বাড়ি কেনার ক্রয়-ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আগামী বছর থেকে অনুর্ধ্ব ৪০ বছরের যেকেউ বছরে সর্বোচ্চ আট হাজার হিসাবে মোট চল্লিশ হাজার ডলার পর্যন্ত করমুক্ত সেভিংস একাউন্টে সঞ্চয় করতে পারবেন। প্রথম বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে করমুক্ত এই সেভিংস বিদ্যমান আরআরএসপি সুবিধার অতিরিক্ত হিসেবে যুক্ত হবে । রেনোভেশন করে একজন বয়স্ক বা প্রতিবন্ধীর জন্য একটি অতিরিক্ত স্যুইট তৈরি করতে উৎসাহিত করার জন্য ৭৫০০ ডলার পর্যন্ত একটি ট্যাক্স রিবেটের প্রস্তাব রয়েছে ।
বাজেটে বলা হয়েছে যে, এক বছরের মধ্যে কোনো প্রোপার্টি ক্রয় ও বিক্রয় করলে এটি “ফ্লিপিং” বলে বিবেচিত হবে এবং তাদের লাভের উপর কর আরোপ করা হবে। বাড়ির বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকার একটি “হোম বায়ারস বিল অফ রাইটস” আনার অঙ্গীকার করেছে, যা অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ব্লাইন্ড-বিডিং-এর সমাপ্তি; যার কারণে বাড়ির ক্রেতাদের অন্যরা কি বিড করছে তা না জেনেই তাদের অফার করতে বাধ্য করে।
অস্থির হাউজিং মার্কেট নিয়ন্ত্রণে এই বাজেট কতটুকু ভূমিকা রাখবে তাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বাজার দরের ওপর হয়তো নতুন বাজেটে ঘোষিত নীতিমালা রাতারাতি খুব একটা প্রভাব ফেলবে না, কিন্তু অন্তত যারা বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে বাড়িকে ব্যবহার না করে প্রকৃতপক্ষে বসবাসের জন্যে ব্যবহার করতে চান, তারা অন্তত স্বস্থি পেতে পারেন।