উপমহাদেশের প্রখাত সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী আলোকেশ বাপ্পি লাহিড়ী সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে গগত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে।
মাত্র তিন বছর বয়সে সংগীতে হাতেখড়ি তার। সেসময় তবলা বাজানো শেখা শুরু করেছিলেন বাপ্পি। এরপর মামা কিশোর কুমারের তার হাত ধরে বলিউডে পাড়ি দিয়েছিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ক্যারিয়ার শুরু করেন সংগীত পরিচালক হিসেবে। তার পরিচালিত প্রথম সুপারহিট গান ‘আও তুমহে চাঁদ পে লে যায়ে’, গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
আশির দশকে সবাই যখন রোমান্টিক গানে ডুবে ছিল, তখন বলিউডকে রীতিতিমতো একটা ঝাঁকুনি দিয়েছিল বাপ্পি লাহিড়ীর সংগীত। হিন্দি ছবির দর্শক চিনেছিল এক নতুন ধারার গান, ‘ডিস্কো’ গান। ধীরে ধীরে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় সংগীতের ‘ডিস্কো কিং’ হিসেবে।
১৯৮৬ সালে একবছরে ৩৩টি সিনে্মার জন্য ১৮০টি গানের সুর করেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী, এই কীর্তির জন্যই তার নাম ওঠে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।
বাপ্পি লাহিড়ীর বৈশিষ্ট্য ছিল তার অনন্য সাজসজ্জা। গলা ভর্তি সোনার গয়না আর রঙিন সানগ্লাসের জন্য হাজার লোকের ভিড়ে তাকে আলাদা করে চেনা যেতো। বপ্পি লাহিড়ীর এই ফ্যাশন মার্কিন পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসনেরও নজর কেড়েছিল। বাপ্পি লাহিড়ী ছিলেন ভারতীয় সঙ্গীত জগতের একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যাকে মাইকেল জ্যাকসন ভারতে তার প্রথম শো-তে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজ-এর খবর অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে মুম্বাইয়ে এই লাইভ শোতে বাপ্পির সঙ্গে আলাপ করেন মাইকেল। তখন ‘ডিস্কো কিং’-এর গয়নার ব্যাপারেও জানতে চেয়েছিলেন পপ সম্রাট। বাপ্পির ‘জিমি জিমি’ গান মাইকেলের ভীষণ পছন্দের, সেকথা বাপ্পিকে জানিয়েছিলেন।
বাপ্পি লাহিড়ীর এই বিখ্যাত গানটি ব্যবহার করা হয়েছিল অ্যাডাম স্যানডলারের ‘ইউ ডোন্ট মেস উইথ দ্য জোহান’ সিনেমাতে।
১৯৬৯ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত নিজের ছাড়া অন্য কোনো সংগীত পরিচালকের সুরে গান করেননি ‘বাপ্পিদা’। তবে ২০০৬ সালে বিশাল শেখরের সুরে ‘ট্যাক্সি নম্বর ৯২১’-এ প্রথম গান গেয়েছিলেন তিনি।
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়ির এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা অলোকেশ লাহিড়ী হয়ে উঠেছিলেন সবার প্রিয় ‘বাপ্পিদা’৷ সদা হাস্যোজ্জ্বল বাপ্পি লাহিড়ীর মৃত্যুতে সংগীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো তাতে কোনো সন্দেহ নেই।