জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে মানুষের ওপর কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলছে—বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে—তা প্রত্যক্ষ করা যায় আবীর আবদুল্লাহর নতুন প্রদর্শনী ঘুরে দেখলে। পৃথিবীকে রক্ষা করতে একটি কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগ কতটা জরুরি তা যেন এই প্রদর্শনীর প্রতিটি ছবি চিৎকার করে বলছে।
আজ শুক্রবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে প্রখ্যাত ফটোসাংবাদিক আবীর আবদুল্লাহর একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ‘ক্লাইমেট মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে তার ৩৪টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।
এ উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবীর আবদুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকায় বসে বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের অবস্থা বুঝা কঠিন। অনেক সময় মূলধারার গণমাধ্যমেও এসব কথা পুরোপুরিভাবে উঠে আসে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার আলোকচিত্রচর্চার চরিত্রই হলো, যেখানে কেউ যায় না বা যেতে পারে না সেখানে যেভাবেই হোক যাওয়া এবং গল্প তুলে এনে পৃথিবীর সামনে হাজির করা।’
প্রদর্শনীর উদ্বোধনে আরো উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, ফ্রান্সের বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গিয়ম অদ্রেন দে কেরদ্রেল, বাংলাদেশের আইইউসিএন জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, এএফপির ব্যুরো চিফ (ঢাকা) শফিকুল আলম, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দে ঢাকার পরিচালক ফসোয়া গ্রুজ প্রমুখ।
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দে ঢাকা ও ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত রোববার ছাড়া প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত নটা পর্যন্ত সবার জন্য প্রদর্শনী খোলা থাকছে।
আবীর আবদুল্লাহর জন্ম ১৯৭১ সালে বাগেরহাটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৯৯ সালে ফটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা করেন। পরে এই প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকতা করেছেন এবং হয়েছেন উপাধ্যক্ষ (২০০-২০১৩) ও অধ্যক্ষ (২০১৮-২০২০)। দৃক পিকচার লাইব্রেরির আলোকচিত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন (১৯৯৬-২০০৫) করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ইউরোপিয়ান প্রেসফটো এজেন্সির স্টাফ ফটোগ্রাফার (২০০৫-২০১৮) হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তার তোলা ছবি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে, প্রদর্শিত হয়েছে বিভিন্ন দেশে।
তিনি আলোকচিত্রের জন্য ২০০১ সালে অর্জন করেন মাদার জোন্স অ্যাওয়ার্ড, ২০০৮ সালে এনপিপিএ বেস্ট অব ফটোজার্নালিম অ্যাওয়ার্ড, ২০১৪ সালে লাইকা রিপোর্টাজ পুরস্কার, অ্যালেক্সা ফাউন্ডেশন প্রোফেশনাল গ্রান্টসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।