ভালোবাসার ভালো সিনেমা

মানুষ মরে যায় প্রেম নাকি থেকে যায়। লোকে বলে প্রেম অবিনশ্বর। হতেও পারে। তার কিছু নিদর্শন তো শিল্পসাহিত্যের ইতিহাসে পাওয়া যায়, লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট যেমন। লেখায়, রঙে, ভাস্কর্যে, স্থাপত্যকলায় ভালোবাসা মূর্ত হয়ে থাকে। চলচ্চিত্র আবিষ্কার হওয়ার পর প্রেমকাহিনী ক্যামেরাবন্দিও হতে শুরু করলো । দেখা গেলো, চলচ্চিত্রের ভাষা ভালোবাসাকে যত সহজে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারছে—আর কোনো মাধ্যম ততটা পারেনি। মানবীয় অনুভূতিগুলোকে নাড়া দিতে চলচ্চিত্র সবচেয়ে কাজের মনে হয়। বিশ্বচলচ্চিত্র জগৎ থেকে পছন্দের দশটি ভালোবাসার সিনেমার কথা তুলে ধরলাম। দেখে নিতে পারেন, পয়সা উসুল হয়ে যাবে

‘শিন্ডলার’স লিস্ট’
বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার স্টিভেন স্পিলবার্গ যে কেবল একশন ফিল্ম বানান তা কিন্তু নয়। তিনি বেশকিছু ভালোবাসার সিনেমা তৈরি করেছেন, কুড়িয়েছেন প্রশংসা ও পুরস্কার। তার নির্মিত তেমনি একটি ছবি ‘শিন্ডলার’স লিস্ট’। যা অর্জন করে ৭টি অস্কার! মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসাই এই ছবির বিষয়বস্তু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া এই ছবিটি আবর্তিত হয়েছে শিন্ডলার নামের একজন ব্যবসায়ীকে কেন্দ্র করে। যুদ্ধের সুযোগে সে ব্যবসায় নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা তাকে একজন জীবন রক্ষাকারী সৈনিকে পরিণত করে। অভিনয় করেছেন, লিম নিসন, বেন কিংসলে, ক্যারোলাইন গুডল, জনাথন সাগল প্রমুখ।

‘এ ওয়াক ইন দ্য ক্লাউডস’
খুব পছন্দের রোমান্টিক সিনেমা। গতানুগতিক প্রেম-কাহিনীর চেয়ে এটি একেবারেই ভিন্ন। পল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সৈনিক হিসেবে কর্তব্য পালন করেছে। যুদ্ধ শেষে সে ফিরে আসে দেশে। তার দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা নেই। ভালোবাসাহীন জীবনে সে হতাশ। একদিন এক বাসে তার পরিচয় হয় ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে। পল জানতে পারে ভিক্টোরিয়া অবিবাহিত-গর্ভবতী। ভিক্টোরিয়া জানায়, এ কথা যদি তার পরিবার জানতে পারে তাহলে তারা কখনই তাকে ক্ষমা করবে না। পল স্বামী সেজে ভিক্টোরিয়ার রক্ষণশীল বাড়িতে হাজির হয়। সবাই জানে, তারপরও ভিক্টোরিয়ার বাবা পলকে মেনে নিতে পারে না। স্বামী না হয়েও তাকে সহ্য করতে হয় অপমান ও অক্লান্ত পরিশ্রম। সবই ভিক্টোরিয়ার জন্য করে যায় সে। কিন্তু এক সময় দুজন দুজনের প্রতি সত্যিই দুর্বল হয়ে পড়ে। শেষে সবাই জেনে যায় তারা স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করছে। পল ফিরে যেতে হয় তার আগের ভালোবাসাহীন জীবনে। পলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কিয়ানু রিভস। আর ভিক্টোরিয়ার ভূমিকায় কাজ করেছেন আইতানা সানচেজ-জিয়ন।

‘ফেইলিয়ার টু লঞ্চ’
ট্রিপ নামের অলস প্রকৃতির ৪৫ বছরের একজন লোকের গল্প এটি। সে তার বাবা মার সঙ্গেই থাকে। তার কাপড় ধোয়া, রান্নাবান্না ইত্যাদি সব কাজ করতে হয় তার মাকে। ঘর থেকে সে বেরই হতে চায় না। বিয়ে কিংবা প্রেম তো দূরের কথা। ট্রিপের বাবা-মা তাকে নিয়ে মহা বিপদে পড়ে। ট্রিপকে ঘর থেকে বের করার চেষ্টাই এই কাহিনীর মূল। কাহিনীতে মোড় আসে  সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ পাউলার আগমনে। পাউলাই এই ছবির নায়িকা। নায়িকার ভালোবাসা ট্রিপের জীবনে আনে আমূল পরিবর্তন। যেভাবে শেষ হওয়ার কথা ছবিটি কিন্তু সেভাবে শেষ হয় না। শেষে চমক আছে। পাউলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সারাহ জেসিকা পার্কার, ট্রিপের ভূমিকায় ম্যাথিউ ম্যাককোনাহে। পরিচালনা করেছেন টম ডে।

‘দ্য লাস্ট হলিডে’
জর্জিয়া নামের এক নারী একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে চাকরি করে। জর্জিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কুইন লাতিফাহ। তার জীবন খুব সাজানো গোছানো ও উন্নত। তার কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষাও রয়েছে। সেগুলো সে পূরণ করতে চায়—পারে না। সে তারই দোকানের কর্মচারী শন ম্যাথিউসকে মনে মনে ভালোবাসে। শনও জর্জিয়াকে চায়। কেউ কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারে না। শনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এলএল কুল জে। এরমধ্যে আকস্মিকভাবে জর্জিয়ার জীবনে আসে এক ট্রেজেডি। কঠিন ব্যাধির শিকার হয় সে। তার বাঁচার আর উপায় থাকে না। জর্জিয়া জীবনের বাকি দিনগুলো রাজকীয়ভাবে উপভোগ করে নিতে চায়। জীবন উপভোগ করতে গিয়ে ঘটে মজার সব ঘটনা। তিক্ত-মধুর এই ভালবাসার কাহিনী সবার ভাল লাগবে। ওয়েইন ওয়্যাং ছবিটির পরিচালক।

‘দ্য ফ্যামিলি স্টোন’
ম্যারেডিথ মর্টন ও এভারিট স্টোনের মিষ্টি মধুর ভালোবাসার কাহিনী এটি। ম্যারেডিথ মর্টনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সারাহ জেসিকা পার্কার। এভারিট স্টোনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ডারমট মুলরনি। ছবিটির পরিচালক টমাস বাজুখা। ম্যারেডিথ জান-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে এভারিটকে। বিয়েও হয়। কিন্তু স্টোন পরিবার ম্যারেডিথকে গ্রহণ করতে চায় না। ফলে পদে পদে অপমানিত হতে হয় তাকে। পরিবারের কারও সঙ্গেই ম্যারেডিথ মানিয়ে নিতে পারে না। তারপরও মুখ বুঝে ম্যারেডিথ সব সহ্য করে—এভারিটের ভালোবাসার খাতিরে। তবে সব সমস্যার সমাধান নিয়ে এক সময় স্টোন পরিবারে যুক্ত হয় ম্যারেডিথের এক বোন। আসল মজা শুরু হয় ঠিক তখন থেকেই।

‘এলিজাবেথটাউন’
ক্যামেরন ক্রো পরিচালিত এই ছবির নায়কের নাম ড্রু বেলর। নায়িকা ক্লেয়ার। ড্রু জুতোর ব্যবসায়ী। তারর ব্যবসায় ধ্বস নামে। একই সঙ্গে আসে বাবার মৃত্যুর সংবাদ। হতাশাগ্রস্থ ড্রু বাবাকে শেষ দেখা দেখতে যে বিমানে করে রওনা হয় সেই প্লেনেই প্রথম পরিচয় হয় ক্লেয়ারের সঙ্গে। এভাবেই তাদের ভালোবাসার শুরু। ড্রুর হতাশ জীবনে আশার জ্বালায় ক্লেয়ার। সাদা-মাটা ছবিটি মন ছুঁয়ে যায়। ড্রুর চরিত্রে আছেন অরল্যান্ডো ব্লুম, আর ক্লেয়ারের ভূমিকায় কার্স্টেন ডানস্ট।

‘এটার্নাল সানশাইন অব দ্য স্পটলেস মাইন্ড’
অস্কারজয়ী এই ছবিটি তাদের জন্য, যারা ছোট ছোট কারণে বহুদিনের ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙে ফেলার ভুল করে বসেন। সিনেমায় ভালোবাসার দুজন মানুষকে দেখা যায়। যাদের সম্পর্কের সেতুতে সাময়িক ফাটল দেখা দেয়। দুজন আলাদা হয়ে যায়। একজন আরেক জনের স্মৃতি ভুলে থাকতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে। কিন্তু কেউই পারে না। তাদেরকে এক হতে হয় ভালোবাসার টানে। এটি একটি মধুর প্রেমকাহিনী। অভিনয় করেছেন কেইট উইন্সলেট, জিম কেরি প্রমুখ। পরিচালক—মিচেল গন্ড্রি।

‘মাস্ট লাভ ডগস’
সারাহ ও জেইকের প্রেমের শুরুটা বেশ মজার। সারাহ একজন স্কুল শিক্ষক। তার পরিবার তাকে বিয়ে উঠেপড়ে লাগে। সারাহর বোন সারাহর জন্য ইন্টারনেটে সুদর্শন পুরুষের খোঁজে বিজ্ঞাপন দেয়। বিজ্ঞাপনে সারা দেয় তালাকপ্রাপ্ত জেইক। জেইকের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী বব। দুজনের মধ্যে শুরু হয় সারাহর মন পাওয়ার হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা। শেষে জয়টা জেইকের হলেও—তা সহজ হয় না। গ্যারি ডেভিড গোল্ডবার্গ পরিচালিত রোমান্টিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, ডায়ান লেইন ও জন কিউসাক।

‘ব্যালেড অব এ সোলজার’
গ্রিগরি চাকরাইয়ের এই ছবিটি সেরা বিদেশি ছবি হিসেবে অস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছিল। এই ছবিটিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত। আলোশা নামের এক বীর সৈনিকের প্রেমকাহিনী এটি। একই সিনেমায় ফুটে উঠেছে দুজন নর-নারীর প্রেমকাহিনী এবং মা-পুত্রের ভালোবাসারও চিত্র। আলোশা যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের জন্য মেডেলের বদলে চায় কয়েক দিনের ছুটি। মাকে দেখতে সে বাড়ি যেতে চায়। ঘরের চালও ঠিক করতে হবে। ছুটি পাই পাই করেও পাওয়া হয় না। এই অসহনীয় সময়ে ট্রেনে পরিচয় হয় সুন্দরী শুরার সঙ্গে। ভালোবাসার শুরুও সেখান থেকে। এভাবেই চলতে থাকে তাদের দিন। দেখা প্রায় হয়ই না। ফলে প্রেমও ঘণীভূত হয়। ট্রাজেডি দিয়ে ছবিটির সমাপ্তি ঘটে। শুরার অভিনয় করেছেন জানা প্রোখোরেনকো, আলোশার ভূমিকায় ভ্লাদিমির ইভাশভ।

‘মেট্রোপলিস’

একটি ভিন্ন স্বাদের ছবি। এই ছবির মাধ্যমে দর্শক ভবিষ্যতে চলে যান। হ্যাঁ, বিজ্ঞান কল্পকাহিনীভিত্তিক ছবিটির সময় ২০২৬ সাল। বিজ্ঞান কল্পকাহিনী হলেও প্রেম ছবিটির উপজীব্য। একটি বিশাল শহর, শহরের মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। এক শ্রেণী বুদ্ধিজীবী, যারা পৃথিবীর উঁচু স্থানে রাজকীয় জীবন ভোগ করে। অন্যদিকে শ্রমিক শ্রেণী। যারা দুঃখ-কষ্টে জীবন যাপন করে। শহরের প্রধান ফ্রেডারসন। তিনি ঐ বুদ্ধিজীবী শ্রেণীরই প্রতিনিধি। শ্রমিক শ্রেণীর নেত্রী মারিয়া। ফ্রেডারসনের ছেলে ফ্রেডার। ঘটনাচক্রে ফ্রেডার মারিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। ভালোবাসা বাড়তে থাকে—বাড়তে থাকে ফ্রেডারের উপলব্ধি। সে শ্রমিকদের দুঃখে কাতর হয়। সে দেখে মর্মাহত হয়, সে দেখে মৃত ও আহত শ্রমিকদের রোবট বানিয়ে আবার শ্রমে লাগায় উঁচুতলার মানুষেরা। শ্রমিক শ্রেণীকদের কষ্ট এবং মারিয়ার ভালোবাসা আমূল বদলে দেয় ফ্রেডারকে। ফ্রিৎজ ল্যাং পরিচালিত ছবিতে অভিনয় করেছেন ব্রিজিট হেল্ম, গুস্তাভ ফোলিশ, আলফ্রেড আবেল প্রমুখ।

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন