আজ ১৯ আগস্ট কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক ও কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের ৮৭ তম জন্মদিন। তাঁর আসল নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। তবে রাজনীতি সূত্রে পাওয়া জহির রায়হান নামেই সুপরিচিত তিনি।
১৯৩৫ সালের এই দিনে ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার অন্তর্গত নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুরে জন্মগ্রহণ করেন জহির রায়হান। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তিনি স্নাতক পড়াশোনা শেষ করেন।
১৯৫০ সালে যুগের আলো পত্রিকার মাধ্যমে জহির রায়হানের সাংবাদিক জীবন শুরু। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সূর্যগ্রহণ’ ১৯৫৫ সালে এবং প্রথম উপন্যাস ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। একে একে ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘সময়ের প্রয়োজনে’, ‘একটি জিজ্ঞাসা’-র মতো নন্দিত সব সাহিত্যকর্ম লিখে গেছেন তিনি।
১৯৫৭ সালে ‘জাগো হুয়া সাভেরা’-য় সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে তাঁর পদার্পণ ঘটে। এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’- এর টাইটেল গানও লেখেন জহির রায়হান। পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনো আসেনি’ (১৯৬১)। ১৯৬৪ সালে তিনি উর্দু ভাষার প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন। পরের বছর মুক্তি পায় তাঁর প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’।
জহির রায়হান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন; অংশ নেন ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানেও। ভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি করে নির্মিত কালজয়ী ‘জীবন থেকে নেওয়া’ চলচ্চিত্রে তিনি একটি পরিবারের রূপক গল্পে ফুটিয়ে তোলেন রাষ্ট্র ও সমাজের শোষণ ও শাসন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জফির রায়হান কলকাতায় চলে যান। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান শুরু করেন, নির্মাণ করেন মর্মস্পর্শী তথ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’। ‘জীবন থেকে নেওয়া’ চলচ্চিত্রের কলকাতা প্রদর্শনীর সব আয় তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।
১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে বড় ভাই কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে চিরতরে নিখোঁজ হন জহির রায়হান।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য জহির রায়হান ১৯৬৪ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৯২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৪ সালে নিগার পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মরণোত্তর বিশেষ পুরস্কার এবং ১৯৭৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।