‘মিমি’ সিনেমা, মাতৃত্ববোধ ও কিছু প্রশ্ন

মায়ের টান—জন্ম দিলে বেশি থাকে নাকি সন্তান পালনের স্বপ্ন দেখলে? এই তর্কের নানা দিক রয়েছে। একেক শ্রেণীতে এর একেক ধরনের সিদ্ধান্ত আসবে। আপনার বেড়ে ওঠাকে, আপনার শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে, আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে দায়ী করতে পারেন এই সিদ্ধান্তের জন্য।

‘মিমি’ সিনেমার ট্রেইলার চোখে পড়ে হঠাৎ করে। দেখার পর মনে হলো, সবই দেখে ফেললাম ট্রেইলারে। উৎকণ্ঠা ছিল না সিনেমাটির জন্য। হাতে সময় ছিল তাই মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে দেখে ফেলি।

গল্পটা অনেকটাই ট্রেইলারে বলে দেয়া। আলোচনা তুলতে চাই সিনেমাটির একটি ভিন্ন দিকে নিয়ে। এটি দেখার সময় মূল গল্পের প্রেক্ষাপট বারবার আমাকে অন্য একটি প্রেক্ষাপটে নিয়ে গেছে। যার কোনো সম্পর্ক হয়তো এই গল্পের সাথে নেই। শ্বেতাঙ্গদের ভারত শাসন নিয়ে অনেক সিনেমাই তৈরি হয়েছে। শ্বেতাঙ্গদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বলি যেন ভারতীয়রা (যদিও বিদেশি দম্পতি মার্কিন নাগরিক), যেমনটি ঔপনিবেশিক শাসনামলে হয়েছে—এই সিনেমা আমাকে এমনটাই ভাবিয়েছে।

এই ভূখণ্ড আবেগ নিয়ে বাঁচে—এই তত্ত্বের সুযোগ অন্য ভূখণ্ড যেমন নেয়—তেমনি নেয় এই ভূখণ্ড নিজেও। ভারতীয় নারীর গর্ভ ভাড়া (স্যারোগেসি) নিতে শ্বেতাঙ্গ দম্পতি ভারতে আসে হয়তো কম মূল্যে পাওয়ার আশায়। কম দামে নিজেদের জন্য শ্রেষ্ঠ বাগানের শ্রেষ্ঠ ফুলটা তারা চায়। এই তত্ত্ব এই ভূখণ্ডে প্রয়োগের স্বাধীনতা ও স্পর্ধা মার্কিন দম্পতি হয়তো পেয়েছে এই অঞ্চলের ইতিহাস মাথায় রেখে।

বাগানের ফুল ভালো না হলে আপনার ড্রইং রুমে জায়গা পাবে না, প্রবণতা আসে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে। তাই বারবার এই গল্পটাকে আমার রাজনৈতিক প্রতীকও মনে হয়েছে।

এই সাধাসিধে মানুষগুলো বরাবরই আবেগের কাছে হার মানে, প্রতিবাদটা যেন পেট ডিঙিয়ে কলিজায় এসে ঠেকে যায়, মুখ দিয়ে বের হয় না। মেনে নেয়াটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর জন্য অবশ্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা দায়ী। নাহলে নিজের যত্নে ফোটানো ফুল কেউ অন্যের ড্রয়িং রুমে রাখতে দিতে রাজি হয়!

এই সিনেমায় মিমি তা করতে রাজি হয়ে যায়। এই মহানুভবতা আপনাকে যতটা মহান করে ততটাই হারানোর বেদনাও দেয়। এবার কথা হলো, আপনি কি শুধু মহানই হবেন! দেউলিয়া হবেন! আপনার অধিকার কি নির্ভর করবে অন্যের ভুল বুঝতে পারার উপর! দয়ার ওপর! এই মহান হওয়ার আত্মতুষ্টি আপনার প্রতিবাদী কণ্ঠকে দাবিয়ে দেবে না তো? বিশ্বায়নের দোহাই দিয়ে ছলে-বলে-কৌশলে আপনাকে আপনার মত করে ভাল থাকতে চাওয়ার অধিকার ছিনিয়ে নেবে না তো?

এই প্রশ্নগুলো আমি তুলতে চাইনি, এই সিনেমার শেষ দৃশ্য আমাকে উস্কে দিয়েছে। গর্ভ ভাড়া বা সন্তান দত্তক কোনোটিতেই আমার সমস্যা নেই।
আমার আপত্তি মহান হতে গিয়ে লড়াইয়ের শক্তি হারিয়ে ফেলায়। একেবারে শেষে আমার ভাবনা ও প্রশ্নগুলো কিছুটা ঝাপসা হয়ে গেলেও—ভাবনা তো ভাবনাই, ভেবে ফেলা যায়, ছুঁড়ে ফেলা যায় না।

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন