‘একজন কুশলী স্রষ্টা’র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

‘চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে
কে আইসা দাঁড়াইসে গো আমার দুয়ারে’

২০১২ সালের এই দিনে অগণিত পাঠক ও দর্শককে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নেন ঈর্ষনীয় জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সে বছরের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তাকে দাফন করা হয় তারই হাতেগড়া গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে।

তিনি একাধারে সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, নাট্যকার ও গীতিকার। দুই বাংলাতেই তার মতো জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক বিরল। এই খ্যাতিমান সাহিত্যিক একাই বাংলাদেশের কলকাতামুখী পাঠককে বাংলাদেশের সাহিত্যের প্রতি মনোযোগী করে তোলেন। প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ (১৯৭২) প্রকাশ হওয়ার পরই আলোচনায় চলে আসেন হুমায়ূন আহমেদ। এই উপন্যাস পড়ে পণ্ডিত ড. আহমদ শরীফ লিখেছিলেন, ‘পড়ে আমি অভিভূত হলাম। গল্পে সবিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছি একজন সূক্ষ্মদর্শী শিল্পীর, একজন কুশলী স্রষ্টার পাকা হাত।’

তারপর আর তাকে থেমে থাকতে হয়নি। একের পর এক গল্প-উপন্যাস দিয়ে গেছেন পাঠকদের। ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘ফেরা’, ‘অয়োময়’, ‘বহুব্রীহি’, ‘আগুনের পরশমনি’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘গৌরীপুর জংশন’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘কবি’, ‘লীলাবতী’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘দেয়াল’সহ লিখেছেন শতশত উপন্যাস। তিনিই মিসির আলী, হিমু, শুভ্র ও রূপার মতো অবিস্মরণীয় চরিত্রের স্রষ্টা। ১৯৭৩ সালে কথাসাহিত্যে লেখক শিবির পুরস্কার, ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।

তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আগুনের পরশমনি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘আমার আছে জল’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ উল্লেখযোগ্য। ‘আগুনের পরশমণি’ আটটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। তিন বিভাগে তিনটি পুরস্কার পান হুমায়ূন আহমেদ নিজেই। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিটিও সাত শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। ‘দুই দুয়ারী’ এবং ‘আমার আছে জল’ দুটি করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র জন্যও সেরা পরিচালকসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আসে।

হুমায়ূন আহমেদেন করা টেলিভিশন নাটকগুলো মানুষের মনে গাঁথা। তার লেখা ও পরিচালিত নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘এই সব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘অয়োময়’, ‘আজ রবিবার’ ইত্যাদি।

তিনি নেই কিন্তু আছে তার অসংখ্য ভক্ত। এখনো তার বই কিনতে বইমেলায় পাঠকের ভিড়, এখনো তাকে তার ভক্তরা নাটক-সিনেমায় খুঁজে ফেরেন। তিনি বেঁচে থাকবেন তার কর্মে। হুমায়ূন আহমেদ একজনই, যিনি না থেকেও আছেন।

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন