
প্রতুল চন্দ্র সরকার। গোটা বিশ্ব তাকে চেনে ‘জাদুসম্রাট’ পি সি সরকার হিসেবে। ঝলমলে পোশাক পরে দর্শকঠাসা মঞ্চে সকলের সামনেই করাত দিয়ে কেটে ফেলতেন মানুষ! আবার কখনো গায়েব করে দিতেন জলজ্যান্ত মানুষ।
১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) টাঙ্গাইল জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বানর খেলার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্রতুল চন্দ্রের। যে মাদারিরা পথে-ঘাটে খেলা দেখাতেন, তাদেরই একদিন পাল্টা খেলা দেখিয়ে দিলেন পি সি সরকার। তার প্রতিভা দেখে চমকে যান মাদারিরা। তারা খুশি হয়ে ছোট্ট প্রতুল চন্দ্রকে বেশকিছু খেলা শিখিয়ে দেন তারা।
ধারণা করা হয় তখন থেকেই জাদুবিদ্যার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় পি সি সরকারের। অল্প বয়সেই জাদুর সঙ্গে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। বাংলার আধুনিক জাদুবিদ্যার পথিকৃৎ বিখ্যাত জাদুকর গণপতি চক্রবর্তীর কাছে জাদুবিদ্যা শিখতে শুরু করেন পি সি সরকার। পি সি সরকার সপ্তম শ্রেণিতে থাকা কালেই শুরু করেন জাদু প্রদর্শন।
প্রথমবার বিদেশের মাটিতে জাদু দেখাতে ১৯৩৪ সালে হংকং যান তিনি। সেই সময়ের একজন বিশ্ববিখ্যাত জাদুকর ছিলেন লাইয়েল। তাকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তিনি। সেসময় স্যুট-প্যান্ট পরে জাদু দেখাতেন জাদুকরেরা। প্রতুল চন্দ্রও তাই পরলেন। দুটি প্রেক্ষাগৃহে একসঙ্গে চলতে থাকলো দুই জাদুকরের জাদু প্রদর্শন।

জাদু দেখতে উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু ধীরে ধীরে দর্শক ঝুঁকতে থাকলো পি সি সরকারের দিকে। দর্শক কমতে কমতে একদিন বন্ধই হয়ে গেল লাইয়েলের শো। আর এভাবেই বিশ্ববাসীর কাছে পি সি সরকার হয়ে উঠলেন ‘জাদুসম্রাট’ পি সি সরকার।
জানা যায়, ‘জাদু’ শব্দটিতে আপত্তি ছিল পি সি সরকারের। তিনি মনে করতেন এই শব্দটিকে খুবই তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মে যেহেতু দেবরাজ ইন্দ্রকে মায়াবিদ্যার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়, তাই দেবরাজের নামানুসারেই তিনি নিজের শোর নাম দিলেন ‘ইন্দ্রজাল’। সেই ইন্দ্রজালই সম্মোহিত করেছিল সারাবিশ্বের কোটি কোটি ম্যাজিকপ্রেমীকে।
এভাবে জাপান, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ পৃথিবীর প্রায় ৭০টি দেশ ঘুরে জাদু প্রদর্শন করে নিজের জন্য সম্মান এবং দেশের জন্য গৌরব অর্জন করেন পি সি সরকার। বিদেশে জাদু দেখিয়ে তিনি বহু পুরস্কারও লাভ করেন । তিনি জার্মান সরকারের গোল্ডবার ও গোল্ডেন লরেল গারল্যান্ড পুরস্কার এবং ভারত সরকার ‘পদ্মশ্রী’ পদকে ভূষিত হন।