১৬ হাজার টাকার ‘স্টপ জেনোসাইড’

 

১৯৭১ সালের জুনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ডকুমেন্টারি ‘স্টপ জেনোসাইড’ নির্মাণ করেন কিংবদন্তি নির্মাতা জহির রায়হান। ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই চলচ্চিত্রে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা, শরণার্থীদের মানবেতর জীবনযাপন এবং অস্থায়ী সরকারের কর্মকাণ্ডকে তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছরে এই চলচ্চিত্রেরও বয়স ৫০ বছর পূর্ণ হলো। নাট্যজন সৈয়দ হাসান ইমাম এই চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলী সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম এই সদস্য দৈনিক প্রথম আলোর কাছে সে সময়কার স্মৃতিচারণ করেন।

‘স্টপ জেনোসাইড’ নির্মাণের সময় অর্থ ও সরঞ্জামের সংকটে পড়েছিলেন নির্মাতারা। ইমাম বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন জহির রায়হান বললেন ছবি বানাবেন, আমি ইস্ট-ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের অফিস সেক্রেটারি প্রামাণিকের সঙ্গে কথা বললাম। তার সঙ্গে আগেও যোগাযোগ ছিল। তার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময় এর আগেও অর্থ সাহায্য পেয়েছিলাম। তাকে বললাম, ‘আমরা একটা ছবি বানাতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের ওপর।’ তখন তার মাধ্যমে ভারতীয় ১৬ হাজার টাকার ব্যবস্থা হলো। জহির রায়হানকে সেই টাকা এনে দিলাম, বললাম, ‘এই নেন আপনার ফান্ড।’ আমরা ১৬ হাজার টাকায় ‘স্টপ জেনোসাইড’ বানালাম। অপর্ণা সেনের মামাশ্বশুর বড় মাপের ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকার ছিলেন, অনেক ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার তিনি পেয়েছিলেন। তার একটি ক্যামেরা ছিল, এই সিনেমা বানাতে ওই ক্যামেরা তিনি আমাদের দিলেন বিনা খরচে। কীভাবে বাংলাদেশে গণহত্যা হচ্ছিল, এটা পৃথিবীর মানুষ জানল এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ছবিটি মুক্তিযুদ্ধে একটা বিরাট ভূমিকা রেখেছিল।’’

ইমাম মনে করেন, চলচ্চিত্রের এই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় সার্থকতা হচ্ছে, আমরা বিজয় অর্জন করেছি। আমরা তো হেরেও যেতে পারতাম। অনেক বড় দেশ আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জন করেছি, সেটাই প্রথম সাফল্য। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারছি।’’

বিজয়ের ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন অনেকটাই বিকশিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইমাম। বর্তমান অভিনয়শিল্পীদের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের অনুযায়ী আমরা এগিয়েছি। বেশ কয়েকটি ভালো চলচ্চিত্র আমরা পেয়েছি। এটাও ঠিক, সংখ্যাটা কমেছে। সারা পৃথিবীতেই কিন্তু ভালো ছবির সংখ্যা এমনিতেই কম। এখন কোনো দেশে বছরে ৫০০ সিনেমা তৈরি হলে মাত্র ৫টি ভালো ছবির খবর পাওয়া যায়। আমরা শুধু ভালো ছবির খবরটা পাই।

শিল্পসম্মত ছবি সারা পৃথিবীতে কম, আমাদের এখানেও কম। এটাও ঠিক, নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা প্রতিভাবান। আমি মনে করি, তারা ক্রমেই এগিয়ে যাবে।’’

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন