‘রে’ নিয়ে তোলপাড়, সন্দীপ রায়ও জানতেন কিছু

নেটফ্লিক্সে ২৫ জুন মুক্তি পেলো বহুল প্রত্যাশিত টিভি সিরিজ ‘রে’। বহুমুখী প্রতিভা সত্যজিৎ রায়ের চারটি ছোটগল্প অবলম্বনে তৈরি চার পর্বের এই সিরিজ। প্রতিটি পর্বই স্বতন্ত্র—তিন পরিচালকের চারটি সিনেমার একটি নাম ‘রে’। পরিচালক অভিষেক চৌবে ‘বারীন ভৌমিকের ব্যারাম’ গল্প অবলম্বনে তৈরি করেছেন ‘হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ বরপা’। ভাসান বালা ‘স্পটলাইট’ গল্প নিয়ে করছেন ‘স্পটলাইট’। আর দুটি পর্ব তৈরি করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়—‘বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম’ অবলম্বনে ‘ফরগেট মি নট’ এবং ‘বহুরূপী’ অবলম্বনে ‘বহুরূপিয়া’। কিন্তু এতো আয়োজন করে করা এই ভিজুয়াল সংকলন প্রশংসার চেয়ে নেতিবাচক মন্তব্যই বেশি পাচ্ছে।

দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছে, ‘কোথাও স্ক্রিনপ্লে ছাপিয়ে গিয়েছে পারফরম্যান্সকে, কোথাও আবার অভিনয়ের জোরেই উতরেছে কাহিনি। তবে দীর্ঘ পর্বগুলির বাঁধুনি আরো মজবুত হতে পারতো। ওটিটি-র প্রধান চ্যালেঞ্জ, দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখা। বিশেষ করে গল্প যখন সত্যজিতের, তখন ধৈর্যচ্যুতির অবকাশ একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়।’

বিশিষ্ট সাংবাদিক অনুপমা চোপরা বলছেন, ‘মাস্টারের (সত্যজিৎ) গল্প আরো ভালো নির্মাণ প্রাপ্য ছিল।’

সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮-এর মতে, ‘সিরিজের কাঠামো, চিত্রনাট্য ও সম্পাদনায় আরো ভালো করার সুযোগ ছিল। কয়েকজনের অভিনয় ভালো হয়েছে।’

চারটি পর্ব নিয়েই ইন্টানেট দুনিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। বেশি কথা হচ্ছে সৃজিতের দুটি নিয়ে। সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে বিজ্ঞজনেরা ভালোভাবে নেননি ছবিগুলো। মিম ভিডিও ও ব্যঙ্গাত্মক ছবিতে ভরে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ‘রে’ পরিচালকদের পাশাপাশি সত্যজিতের ছেলে চলচ্চিত্র নির্মাতা সন্দীপ রায়েরও নিন্দা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের ক্ষোভ, সন্দীপ কেন সত্যজিতের গল্প দিয়ে সিনেমা করার অনুমতি দিলেন। একটি মিমে দেখা যাচ্ছে, ‘জয়বাবা ফেলুদানাথ’ সিনেমার খলনায়ক মগনলাল (উৎপল দত্ত) সন্দীপ রায়কে বলেছেন, ‘সন্দীপ বাবু, আপনি তো আপনার ফাদারের কাহিনির রাইটস কাউকে দিতেন না?’ জবাবে সন্দীপ বলছেন, ‘সেরকমই তো ইচ্ছে ছিলো’। মগনলাল বলছেন, ‘ছিলো যদি, তো আপনি মাইন্ড চেঞ্জ করলেন কেন?’

এদিকে সন্দীপ বলিউড হাঙ্গামাকে বলেছেন, পুরো প্রজেক্টের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই যুক্ত ছিলেন না। নেটফ্লিক্স অনুমতি চেয়েছিল তিনি দিয়েছেন, ব্যাস—এটুকুই। তারপর কেউই তাকে কোনো কিছু জানায়নি, দেখায়ওনি। তার কাছে কোনো চিত্রনাট্য পাঠানো হয়নি এবং অবশেষে কি দাঁড়ালো—তাও দেখানো হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে সন্দীপ জানিয়েছেন, এরপর থেকে অনুমতি দেয়ার আগে আরো সচেতন থাকবেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘রে’র প্রোমো তার ভালো লাগেনি। বললেন, ‘আমি এখন ছবিগুলো দেখতে ভয় পাচ্ছি। একইসঙ্গে অবশেষে বাবার গল্পগুলো কি রূপ নিলো তা দেখতেও আগ্রহ বোধ করছি।’

সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়। হিন্দুস্তান টাইমস সৃজিতকে উদ্ধৃত করেছে, ‘আমি রুচিবাগীশ (পিউরিস্ট) ব্যক্তিদের থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই আশা করছি, অন্যদিকে সত্যজিতের রায়ের সঙ্গে যাদের সরাসরি যোগ নেই কিংবা থাকলেও যাদের চিন্তাভাবনা মুক্ত, তারা হয়তো বিষয়টি সাদরে গ্রহণ করবেন। সেই সকল দর্শক যারা সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে গভীরে জানেন না, অথবা সঠিকভাবে বললে সত্যজিৎ-প্রেমী নন, তারা হয়ত চারটে গল্পই খুব দারুণভাবে এনজয় করবেন। কিন্তু যারা কিংবদন্তির কাজ নিয়ে কাটাছেঁড়া পছন্দ করেন না, তাদের জন্য এটা একটু শক্ত কাজ হবে’।

‘নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়া’ ইউটিউব চ্যানেলে ২৮ মে মুক্তি পেয়েছিল ‘রে’র টিজার। দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেই টিজার দেখতে। টিজার দেখে প্রত্যাশা অনেক বেড়ে যায়, শুরু হয় অপেক্ষার পালা। তখন সবাই পুরো উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলো। তাহলে কি আশার মুখে ছাই পড়লো? নাকি ‘মহারাজা’র গল্পকে এদিক-ওদিক করাকে মেনে নিতে পারলো না দর্শক? এসব প্রশ্নের উত্তর সহসাই মিলবে না। ইতিহাস ঠিক বিচার করবে, ‘রে’ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলো কি পারলো না।

এমন আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ বিনোদন