সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসনের ‘বিলি জিন’ গানটি আজ থেকে ১১ বছর আগে ইউটিউবের ‘মাইকেল জ্যাকসন’ চ্যানেলে আপলোড হয়েছিল। সেই গানটি এখন পর্যন্ত ১০০ কোটিরও বেশি বার দেখা হয়েছে! আশির দশকে একক শিল্পীর করা গানগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম যা শত কোটির মাইলফলক ছুঁয়েছে। এর আগে ‘গানস এন রোজেস’ ব্যান্ডের ‘সুইট চাইল্ড ও মাইন’, ‘নভেম্বর রেইন’, ‘আ-হা’ ব্যান্ডের ‘টেক অন মি’ ইত্যাদি গান শত কোটি ভিউ অর্জন করেছে। মাইকেল জ্যাকসনের এই সুপারহিট গানটি ১৯৮৩ সালে প্রথম বাজারে আসে। এমটিভি গানটির মিউজিক ভিডিও প্রচার করেছিল। ইউটিউবের তথ্য অনুযায়ী, ‘বিলি জিন’ গানটি প্রতিদিন গড়পড়তা ৬ লাখ দর্শক উপভোগ করেন। তবে ‘বিলি জিন’কে কিন্তু অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।
নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ বলছে, বর্ণবাদের শিকার হতে হয়েছিল মাইকেল জ্যাকসনকে। আর এই কারণেই এমটিভি প্রথমে এই গানটি প্রচার করতে অস্বীকার করে। এমটিভির মতে, কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীর তৈরি ‘বিলি জিন’ যথেষ্ট ‘রক’ নয়। তখন সিবিএস রেকর্ডসের তখনকার প্রেসিডেন্ট ওয়াল্টার ইয়েটনিকফ এমটিভিকে বলেন, ‘বিলি জিন’ যদি প্রচার করা না হয়, তাহলে সিবিএস রেকর্ডস এমটিভি থেকে অন্যান্য শিল্পীদের গানও ফিরিয়ে নেবে, ভবিষ্যতে আর কোনো ভিডিও এমটিভিকে দেয়া হবে না এবং সিবিএস রেকর্ডস সাংবাদিকদের বলবে, এমটিভি কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীর করা গান সম্প্রচার করতে চায় না। এরপর আর কথা থাকে না, এমটিভি বাধ্য হয়ে গানটি তাদের চ্যানেল চালায়।
বাধ্য হয়ে চালিয়ে ক্ষতি হয়নি বরং কোটি কোটি টাকা লাভই হলো। সম্প্রচারের কয়েকদিনের মধ্যে গান ও গানের ভিডিও বিশ্বব্যাপী সুপার-ডুপার হিট হয়। ১৯৯২ সালে মিউজিক ভিডিওটি ‘মিউজিক ভিডিও প্রোডিউসার্স হল অব ফেম’-এ জায়গা করে নেয়। এটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মিউজিক ভিডিওর একটি হিসেবে স্বীকৃত। গানটি লিখেছিলেন মাইকেল নিজেই এবং প্রযোজনায় ছিলেন কুইন্সি জোন্স। গানটির ভাগ্যে আরো জোটে দুটি গ্র্যামি এবং দুটি আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ড।
গতকাল ২৫ জুন ছিল ‘কিং অব পপ’-এর মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৯ সালের এই দিনে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অ্যানেস্থেসিয়ার ওভারডোজে মাইকেল মারা যান৷ প্রশ্ন উঠেছিল, তিনি কি আত্মহত্যা করলেন? যাহোক, মৃত্যুতেও রেকর্ড গড়েন এই কিংবদন্তি, তার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান পৃথিবীর ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষ সরাসরি টেলিভিশন ও অনলাইনে দেখেন। এতো মানুষ কখনো কারো শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান দেখেনি। সেসময় উইকিপিডিয়াতে এক ঘণ্টার মধ্যে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ মাইকেলের জীবনী পড়ে। এই চাপে উইকিপিডিয়া ক্রাশ করেছিল! আর গুগলকে তাদের সার্চ ইঞ্জিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল প্রায় আধঘণ্টা!
মাইকেলেরর জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যে—এক আফ্রো-আমেরিকান পরিবারে। তিনি তার বাবা-মার সপ্তম সন্তান। মাইকেলের পুরো নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মাইকেল জ্যাকসনকে কারখানায় কাজ করতে হয়েছে। সংগীতশিল্পী হিসেবে শুরুটা বাল্যকাল থেকেই। তিনি এবং তার ভাইবোনেরা সংগীতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৩ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই মাইকেল জ্যাকসন পেশাদার শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত মিউজিক অ্যালবামগুলোর মধ্যে মাইকেল জ্যাকসনের ৫টি অ্যালবাম রয়েছে। সেগুলো হলো, অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড ( ১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) ও হিস্ট্রি (১৯৯৫)। থ্রিলার অ্যালবামের ১১০ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে মাইকেলের গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের সংখ্যা ১৩। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বহুবার তার নাম উঠেছে।
মানবিক সহায়তা প্রদানের দিক থেকেও মাইকেল ছিলেন সবার চেয়ে এগিয়ে। তার দানকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে নানা বিতর্কেও জড়িয়েছে তার নাম।