করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা সামলে সম্প্রতি কিছুটা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে আর সবকিছুর মতোই বলিউডও কিছুটা পালটে গেছে। লকডাউনে বাসায় আটকা থাকার সুবাদে দর্শকেরা ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্মের দিকে বেশি ঝুঁকছেন, যার প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। ওটিটি প্লাটফর্মে ভারতীয় কনটেন্টগুলোর নতুন এক বিশেষত্ব দেখা যাচ্ছে – পরিচালকেরা এসব চলচ্চিত্রে গান তেমন একটা ব্যবহার করছেন না। করোনার ভয়াবহতা অনেকটা কাটিয়ে উঠলেও বলিউড সংস্কৃতির এই অচেনা চেহারা কিন্তু এখনো রয়ে গেছে। তবে ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী কৈলাশ খের মনে করছেন, হলিউডের প্রভাবে আসা এই পরিবর্তন আসলে ক্ষণস্থায়ী, বলিউডে গানই বরং চিরঞ্জীব।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে কৈলাশ খের বলেন, “ইতিহাস বলে, ভারতে চলচ্চিত্র ভালো হোক আর মন্দ, গান যদি ভালো হয় তা চলচ্চিত্রের চেহারাই পালটে দিতে পারে। সুতরাং, নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা তো চলতেই থাকবে, কিন্তু শুধু চলচ্চিত্র নয় – সবকিছুরই অপরিহার্য এক অঙ্গ হয়ে থাকবে সঙ্গীত।“
করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা ভারত কিছুটা সামলে ওঠার পর লখনৌর এক কনসার্টে গেয়ে লাইভ পারফরমেন্সে ফিরেছিলেন কৈলাশ। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এর আগে আমরা পুরো ব্যান্ড মিলে কোনো অডিটরিয়ামে বসে ভার্চুয়াল লাইভ করতাম, যেখানে দর্শক থাকতো না – ডিজিটালি স্ট্রিম হতো। তাই আমার মনে হয় এই লাইভ ও ভার্চুয়াল কনসার্ট বরং স্বাভাবিকতার জায়গাটা দখল করে নিয়েছে, আর এমনটাই চলতে থাকবে। কোভিড-১৯ ঘটিত নিয়মকানুন এবং সময়ের স্বল্পতার কারণে সবাই একসঙ্গে এক জায়গায় সবসময় জড়ো হতে পারছে না। তাই ভার্চুয়াল কনসার্ট এসেছে টিকে থাকতেই!”
অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এসব কনসার্টের পৃষ্ঠপোষকতা করছে । এই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কৈলাশ। তিনি বলেন, “প্রথম লকডাউনের সময় আমরা যখন বিনামূল্যে পারফর্ম করছিলাম, তখন সামাজিক কল্যাণের নামে শত শত ডিজিটাল শোয়ের খপ্পরে পড়ে যাই। কিন্তু আমাদের ১৬ জনের ব্যান্ডের সবারই তো পরিবার আছে! ডিজিটাল শোগুলো সাশ্রয়ী – এই বিষয়টি কর্পোরেট হাউজগুলো বুঝতে পেরেছে, আর তাতে পুরো ব্যাপারটা মিটে গেছে।
পে-টু-ভিউ শোয়ের ধারণা ভারতে এখনো ঠিক পরিণত হয়নি, এখানে শিল্পের আর্থিক মূল্যের ধারণাটাই আমাদের কাছে অপরিচিত। তবে শিল্প আর শিল্পীর জন্য যেহেতু এটা জরুরি, আমরা এতে আস্তে আস্তে মানিয়ে নেবো।”
কৈলাশ এবার নিজের মিউজিক অ্যাকাডেমি খুলতে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতায় নিজেকে সঙ্গীত অঙ্গনে বহুমুখী বিকাশের সাক্ষী হিসেবে দেখছেন তিনি। বলছেন, “যখন আমি কিছু পরিবারের সঙ্গে কথা বললাম, দেখলাম আমাদের প্রথম দিককার গানগুলোর সমসাময়িক শ্রোতা তো আছেই। আর এসব গানের আবেদন এমন তরুণদের কাছেও আছে, যারা সাম্প্রতিককালের ‘বাহুবলি’ ‘আদি ইয়োগি’ বা ‘ছোটি সি চিড়িয়া’ শুনছে। তাই সঙ্গীতে তাদের অগ্রসরতা দেখে আমি মুগ্ধ।”