২০২০ সালের গোড়ার দিকে অবিন্তা কবিরের পরিবার একটি উকিল নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, বাংলাদেশে ২০১৬ সালের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত অবিন্তা কবিরের চরিত্র রেখে কোনো চলচ্চিত্র তৈরি করা যাবে না। ওই সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশিদের একজন অবিন্তা। উকিল নোটিশে আরো স্পষ্ট করা হয়েছিল, অবিন্তা কবিরের সঙ্গে মেলে এমন কোনো চরিত্রও চলচ্চিত্রে রাখা যাবে না। কয়েকদিন আগে খবর এলো, বলিউডে এই হামলার ঘটনা নিয়ে সিনেমা তৈরির তোড়জোর চলছে। তার বিরুদ্ধে এবার সিনেমা প্রযোজনা সংস্থাকে আইনি নোটিশ দিলো ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’।
ওই জঙ্গি হামলায় আরো নিহত হয়েছিলেন ২০ বছর বয়সী বাংলাদেশি তরুণ ফারাজ আহমেদ। তিনি ‘ট্রান্সকম গ্রুপ’ ও ‘মিডিয়াস্টার’-এর প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি। ‘মিডিয়াস্টার’-এর মালিকানাধীন প্রথম আলো পত্রিকা জানিয়েছে, ‘‘নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার মুখে ফারাজের বীরত্ব ও ত্যাগ নিয়ে এবার বলিউডে তৈরি হচ্ছে সিনেমা। নাম ‘ফারাজ’। ছবিটি নির্মাণ করছেন ‘আলীগড়’, ‘ওমের্তা’, ‘শহীদ’খ্যাত পরিচালক হংসল মেহতা।’’
পত্রিকাটি জানিয়েছে, সিনেমাটির প্রযোজক বলিউডের ‘টি-সিরিজ’ ও ‘বেনারস মিডিয়া ওয়ার্কস’। সিনেমার পোস্টারও প্রকাশিত হয়। কারিনা কাপুরের চাচাতো ভাই জাহান কাপুর ও পরেশ রাওয়ালের ছেলে আদিত্য রাওয়ালের এ সিনেমায় অভিনয় করার কথা রয়েছে। এ খবর প্রকাশের পরপরই প্রতিক্রিয়া দেখায় অবিন্তা কবিরের পরিবার ও ফাউন্ডেশন। নোটিশে বলা হয়, ‘সকলের কাছে যা কেবল একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড, তা অবিন্তার মা এবং তার পরিবারের জন্য এক চরম দুর্ভাগ্য এবং নির্মম সত্য।… হোলি আর্টিসানকে কেন্দ্র করে কোনোরূপ মিডিয়া নির্মাণের মাধ্যমে সে সকল ঘটনা আবার জনগণের মাঝে প্রচার করলে, তা কেবল সেই দুর্ঘটনার করুণ এবং কষ্টদায়ক স্মৃতিগুলোকেই আবার জাগিয়ে তুলবে, যা অবিন্তার মা এবং তার পরিবার প্রতিনিয়ত ভুলে থাকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
আরো বলা হয়েছে, ‘ফারাজ’ চলচ্চিত্রটির সঙ্গে জড়িত সকল প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা, কলাকুশলী, মিডিয়াসংস্থা, মিডিয়া বিতরণকারীসংস্থা, লেখক, স্ক্রিপ্ট-লেখকগণকে হোলি আর্টিসান ঘটনাকে তুলে ধরে বা এমন কোনো চরিত্রকে বর্ণনা করে যার সাথে অবিন্তা কবিরের প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ সাদৃশ্য রয়েছে, এমন যেকোনো পূর্ণ বা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, টেলি-ফিল্ম, নাটক, নাটিকা, উপন্যাস, গল্প ইত্যাদির রচনা, প্রযোজনা, পরিচালনা, বিতরণ, বিপণন, উপস্থাপন, প্রকাশনা, অভিনয় ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়াও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন ধরনের কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ বা বাংলাদেশেকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপনা করে এমন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতেও নোটিশে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এরপরও এ বিষয়ে যদি কোনো নির্মাণ কাজে কেউ লিপ্ত হন, তাহলে সবার বিরুদ্ধে ভারতীয় আদালতে প্রতিনিধির মাধ্যমে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। নোটিশ প্রদানকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিতি সানজানা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এর আগে মহেশ ভাটসহ অনেকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু আইনি ব্যবস্থা নেয়ায় তারা আর সিনেমা তৈরিতে হাত দেননি।
তিনি আরো জানিয়েছেন, গত ৯ আগস্ট ‘লিগ্যাল কাউন্সেল’-এর পক্ষ থেকে ‘ টি-সিরিজ’, হানসাল মেহেতা এবং অনুভব সিনহাকে নোটিশটি পাঠানো হয়। কিন্তু এবিষয়ে এখনো প্রযোজনা সংস্থা বা ফারাজের পরিবারের কোনো প্রতিক্রিয়া সামনে আসেনি।