মৃত্যুর আগে ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সেই ঘটনা নিয়ে নেটদুনিয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তবে ভারতের এই পুরস্কার সর্বপ্রথম যিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনিও ছিলেন একজন বঙ্গসন্তান। তারপর আরো অনেকে এই সম্মাননা প্রত্যাখান করেছেন।
শিশির কুমার ভাদুড়ি
এই পুরস্কার সর্বপ্রথম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ি । ১৯৫৯ সালে শিশিরকুমারকে পদ্মশ্রী দেবার কথা ঘোষণা করে নেহেরু সরকার। কিন্তু বাংলা থিয়েটার জগতের এই কিংবদন্তি সেই পুরস্কার ফিরিয়ে দেন। সরকার থিয়েটার মাধ্যমকে গুরুত্ব না দিয়ে অবহেলা ওও অগ্রাহ্য করে, এরই প্রতিবাদে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় শিশিরকুমার জানিয়েছিলেন, “সরকার কোনোদিন থিয়েটারকে গুরুত্ব দেয়নি, তাই এই পুরস্কার গ্রহণ করে আমি মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে চাই না। রাষ্ট্রের এই সম্মান আদতে স্তাবকের দল গঠনের একটা প্রচেষ্টা মাত্র।”
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
১৯৮৭ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। যদিও এর কারণ কখনোই স্পষ্ট করে বলেননি তিনি। তবে শোনা যায়, বাংলা ও হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করা এই শিল্পী কোনো পুরস্কারের ধার ধারেননি কোনোদিন। প্রায় ১০টি ভাষায় গানের সুর তৈরি করার দক্ষতা ছিল হেমন্তের, মানুষের ভালোবাসাই ছিল তার পুরস্কার।
বাদল সরকার
বাংলা নাটকের ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র বাদল সরকার। তিনি ‘পদ্মশ্রী’ ও ‘পদ্মভূষণ’ সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৯৬৯ সালে সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার পান। এরপর সত্তরের দশকে ‘পদ্মশ্রী’ নেয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। খ্যাতনামা এই নাট্যকার জানান, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কারের মধ্য দিয়েই জীবনের সেরা সম্মান তিনি পেয়েছে। পরে ২০১০ সালে সরকার তাকে ‘পদ্মভূষণ’ — দিতে চাইলে তিনি তাতে সম্মত হননি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
‘পদ্মশ্রী’ সম্মান প্রত্যাখ্যানের তালিকায় প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নামও রয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী সরকারের তরফ থেকে তাকে এই পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সৌমিত্র তা নেননি। বলেছিলেন, “ভারতীয় সিনেমার উন্নতির জন্য কিছুই করছে না সরকার। তাই সিনেমা জগতের একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে এই পুরস্কার গ্রহণ করতে আমি নারাজ।” যদিও পরবর্তীতে ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মাননা গ্রহণ করেন তিনি।