অভিনেতা অভিনেত্রীর জীবন দেখে সবাই ভাবে তারা কতো ভাগ্যবান! অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি কোনো দিক থেকেই কমতি নেই তাদের। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতে সব অভিনেতাদের জীবন এতোটা মসৃণ হয় না। কঠিন জীবন-সংগ্রাম এবং অভিনয় প্রতিভার মাধ্যমে নিজেদের সেই উচ্চতায় নিতে হয়। জনপ্রিয় অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠির জীবনও ব্যতিক্রম নয়।
১৯৭৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিহারের একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি। তার বাবা ছিলেন দরিদ্র চাষী। বাবা ভাবতেন ছেলে বড় হয়ে তার চাষাবাদে সাহায্য করবে। কিন্তু উচ্চশিক্ষার জন্য বিহার থেকে পাটনায় চলে আসেন পঙ্কজ। সেখানে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি থিয়েটারে ‘আন্ধা কুয়া’ নাটক দেখার সুযোগ পান। নাটকের অভিনেতা প্রণিতা জসওয়ালের অভিনয় দেখে পঙ্কজ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন থেকেই পঙ্কজ থিয়েটারের প্রতি আকৃষ্ট হন।
তিনি ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে পাটনায় অনুষ্ঠিত সব ধর্মীয় ও মঞ্চ অনুষ্ঠান দেখতে যেতেন। সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াতেন। একসময় বিনামূল্যে অভিনয়ের তালিম কোথায় পাওয়া যায় তার সন্ধান শুরু করেন তিনি। কারণ তার টাকা নেই।
পরে দিল্লিভিত্তিক ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা (এনএসডি) সম্পর্কে জানতে পারেন। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে তালিকাভুক্তির জন্য স্নাতক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক ছিল। তারপরও তিনি হাল ছাড়েননি। তার মাথায় যে অভিনয়ের ভূত! দ্বাদশের লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে তিনি হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স করেন। পাশাপাশি হোটেলে নাইট শিফটে চাকরিও নেন।
সকালে থিয়েটারে অভিনয় করেন। আবার গ্রাজুয়েট হতে লেখাপড়াও শুরু করেন। গ্রাজুয়েট না হলে তো এনএসডিতে ভর্তি হতে পারবেন না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান টাইমস থেকে জানান যায়, ২০০৪ সালে তিনি এনএসডিতে তার অভিনয় কোর্স শেষ করেন। এনএসডিতে অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী তার আট বছরের সিনিয়র ছিলেন। সেই বছরই মৃদুলা ত্রিপাঠিকে বিয়ে করেন পঙ্কজ। ২০০৪ সালের অক্টোবরে পকেটে ৪৬ হাজার রুপি নিয়ে তিনি মুম্বাই চলে যান। তার চোখে বড় অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু ডিসেম্বরের মধ্যে তার কাছে মাত্র দশ টাকা অবশিষ্ট ছিল বলে জানিয়েছিলেন এই অভিনেতা।
২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তার হাতে কোনো বড় কাজ আসেনি। এমনো হয়েছে কাজের আশায় পরিচালকের বাড়ির পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে থেকেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেই সময় তার স্ত্রী সংসার চালাতেন বলে জানিয়েছেন নিজেই। পঙ্কজ সংসারে কোনো আর্থিক ভূমিকা রাখতে পারতেন না।
তার এই চেষ্টা ও উদ্যম অবশেষে সার্থক হয়। এখন ভরতের ব্যস্ততম অভিনেতা তিনি। ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’, ‘নিউটন’, ‘মির্জাপুর’, ‘কাগজ’, ‘মিমি’র মতো বহু আলোচিত সিনেমায় কাজ করে তিনি দর্শকের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন। ওয়েব সিরিজ দুনিয়ায়ও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলাদেশ নিয়ে নেটফ্লিক্স প্রযোজিত সিনেমা ‘এক্সট্র্যাকশন’-এ ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি।