বিশ্বের প্রভাবশালী সংগীত পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম এ আর রহমান। সুর-সংগীত আর কণ্ঠ দিয়ে তার মোহময় ইন্দ্রজালে জড়ায়নি, এমন শ্রোতা কম আছে। সেই জাল নতুন আবহে আর আবেগে ছড়িয়ে গেল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর (২৬ মার্চ) রাতে ঢাকার প্যারেড গ্রাউন্ডে। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে গান বাঁধলেন অস্কারজয়ী এই মিউজিক মায়েস্ত্রো। ‘বলো জয় বঙ্গবন্ধু’ নামে হিন্দি ভাষার এই গানটি লিখেছেন বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী গীতিকবি জুলফিকার রাসেল।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে ঘিরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের ‘মুজিব চিরন্তন’ উৎসবের পর্দা নেমেছে ২৬ মার্চ রাতে। মূলত শেষ দিনের সেরা চমক হিসেবেই প্রকাশ হয় এ আর রহমান-জুলফিকার রাসেলের গানটি। করোনার কারণে এদিন এ আর রহমান অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলেও সরাসরি উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি! উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছিলেন অন্য অতিথিদের সঙ্গে গীতিকবি জুলফিকার রাসেলও।
গানটি যখন বাজছিলো, মাথা দুলছিলো দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। গানটি যখন শেষ হলো, মুহুর্মুহু করতালি ঢেউ খেলে গেল প্যারেড গ্রাউন্ড হয়ে প্রচারমাধ্যম সূত্রে বিশ্বজুড়ে। কেমন অনুভূতি হলো তখন?
জবাবে জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘এটি এমনই এক মুহূর্ত ছিলো, সেটি আসলে মুখে বলে বা লিখে প্রকাশ করার সামর্থ্য আমার নেই। কীভাবে এতকিছু হয়ে গেল, টেরই পাইনি। এতো বড় উৎসবের শেষ দিনের আয়োজনে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে অতিথি হয়ে এলেন ভারতের নরেন্দ্র মোদি। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান চমক হিসেবে নতুন গান বাজলো এ আর রহমানের কণ্ঠ-সুরে! সেই গানটি আমার লেখা, এটুকু ভাবলে এখনও নিজের গায়ে চিমটি কাটি। ভ্রম বলে মনে হয়।’
এদিকে এ আর রহমানের কণ্ঠে হিন্দি ভাষায় তৈরি ‘বোলো জয় বঙ্গবন্ধু’ গানটি প্যারেড গ্রাউন্ডে পরিবেশনের পর থেকে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। গানটির শুরু বাংলায়, ‘আমার সোনার বাংলা’ বাক্যটি দিয়ে। এরপর থেকে প্রশংসায় ভাসছেন এ আর রহমান আর শুভেচ্ছায় ডুবে যাচ্ছেন জুলফিকার রাসেল। বলা দরকার, বাংলাদেশের জন্য এ আর রহমানের তৈরি এটাই প্রথম কোনও গান।
রহমানের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জুলফিকার রাসেল জানান আরেকটি চমকিত তথ্য। একটি নয়, তার কথায় এ আর রহমান আরও একটি গান তৈরি করে রেখেছেন। সেটিও দেশাত্মবোধক। এবং অপ্রকাশিত সেই গানটি বাংলা ভাষায়! ‘আজও শুনি বজ্রধ্বনি’ শিরোনামের এই গানটিও ঘটাকরে উন্মোচন হবে বিশেষ একটি জাতীয় আয়োজনে, এই মুজিববর্ষে।
জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, আমার লেখা এ আর রহমানের গানটি যে ২৬ মার্চ উৎসবের শেষ চমক হিসেবে ডিসপ্লে হবে, সেটাই আমি জানতাম না! জেনেছি সেদিন বিকালে। আমার জীবনে একসঙ্গে এতগুলো প্রাপ্তি যোগ হওয়ার পেছনে শ্রম-সততা তো রয়েছেই- সঙ্গে ভাগ্যটাও আমাকে সাহায্য করেছে। তা না হলে, আকাশছোঁয়া এ আর রহমানের বাসায়-স্টুডিওতে গিয়ে গান দুটি তৈরির সৌভাগ্য হতো না। প্যারেড গ্রাউন্ডে এশিয়ার দুই শীর্ষ নেতার সামনেও আমার গান বাজতো না। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই প্রতিটি মানুষের প্রতি- যারা এই স্বপ্নিল জগতে আমাকে পৌঁছে দিয়েছেন।’
এ আর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘তিনি যেমন বিশ্বমানের কম্পোজার, তেমনই বিনয়ী একজন মানুষ। উনাকে দেখে শিখলাম, বড় হতে চাইলে কতোটা বিনয়ী হতে হয়।’
এখানেই শেষ নয় জুলফিকার রাসেলের গীতিকবিতার চমক। একই উৎসবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর থিম সঙ লিখেছেন তিনি। সাজিদ সরকারের সুর-সংগীতে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন বিভিন্ন প্রজন্মের ৫০ জন শিল্পী। এই গানটিও শেষ দিনের মঞ্চে পরিবেশন করা হয় দুই প্রধানমন্ত্রীর সামনে।
তবে ১০ দিনের এই জাতীয় উৎসবে গীতিকবি হিসেবে জুলফিকার রাসেল নিজেকে আলাদা প্রমাণ করে দিলেন শুরুতেই। গানের সুরে বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করলেন এই বলে- ‘হয়েছে কি সোনার বাংলা, যেমন আপনি দেখতে চান?/ মিনতি আজ করি পিতা, একবার এসে দেখে যান!’ গানটির কথাগুলো তুমুল প্রশংসিত হয় চারপাশে।
‘মুজিব চিরন্তন’ উৎসবের দ্বিতীয় দিন পাভেল অরীনের সুর-সংগীতে বিশেষ এই গানটি মঞ্চে উঠে পরিবেশন করেন অদিতি মহসিন, শারমিন সুমী, লিংকন ডি কস্তা ও তাশফী।