কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরীর পর সোনালী দিনের চিত্রনায়ক ওয়াসিম আর নেই। শনিবার দিবাগত রাত (১৮ এপ্রিল) সাড়ে ১২টার দিকে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, ‘অনেক দিন ধরেই ওয়াসিম ভাই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন রাজধানীর শাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না।’
তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশন এবং লোক ফ্যান্টাসির নায়ক হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হত। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকার চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ছিল দ্য রেইন, ডাকু মনসুর, জিঘাংসা, কে আসল কে নকল, বাহাদুর, দোস্ত দুশমন, মানসী, দুই রাজকুমার, সওদাগর, নরম গরম, ইমান, রাতের পর দিন, আসামি হাজির, মিস লোলিতা, রাজ দুলারী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন, জীবন সাথী, রাজনন্দিনী, রাজমহল, বিনি সুতার মালা, বানজারান।প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক এস এম শফীর হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক ঘটে ওয়াসিমের। ১৯৭২ সালে শফী পরিচালিত ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হন তিনি। এতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেন। ১৯৭৪ সালে আরেক প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রে প্রথম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। চলচ্চিত্রটির অসামান্য সাফল্যে রাতারাতি সুপারস্টার বনে যান তিনি।
ওয়াসিম দেড়শ’র মতো ছবিতে নায়ক ছিলেন। অল্প কিছু ছবি ছাড়া প্রতিটি ছবিই সুপারহিট হয়েছিল। ‘দি রেইন’ তাকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়। পৃথিবীর ৪৬টি দেশে ‘দি রেইন’ মুক্তি পেয়েছিল। ছবিতে ওয়াসিমের নায়িকা অলিভিয়া। পরবর্তী সময়ে ওয়াসিম-অলিভিয়া জুটি বেঁধে বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। ‘বাহাদুর’ এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন প্রভৃতিও সফল হয়েছিল। শাবানা, সুচরিতা, অঞ্জু ঘোষ, সুজাতা প্রমুখের বিপরীতেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। তবে শাবানা আর অলিভিয়ার সঙ্গে ওয়াসিম যেসব ছবিতে অভিনয় করেছেন তার প্রতিটিই ব্যবসাসফল হয়েছিল। ‘রাজ দুলারী’তে ওয়াসিম ও শাবানার অভিনয় সেদিন দর্শকদের দারুণ মুগ্ধ করেছিল। ছবিতে তাদের মুখের গানগুলো ছিল দর্শকের মুখে মুখে ফেরে।
ওয়াসিম বিয়ে করেছিলেন চিত্রনায়িকা রোজীর ছোট বোনকে। তাদের দুটি সন্তান হয় – পুত্র দেওয়ান ফারদিন এবং কন্য বুশরা আহমেদ। ২০০০ সালে তার স্ত্রীর অকালমৃত্যু ঘটে। ২০০৬ সালে ওয়াসিমের কন্যা বুশরা আহমেদ চৌদ্দ বছর বয়সে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। পরীক্ষা চলাকালীন নকলের অভিযোগ তার পরিবারকে জানাবার প্রাক্কালে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে বুশরা লাফ দেন। অন্যদিকে পুত্র ফারদিন লন্ডনের কারডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ব্যারিস্টার হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত।