চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত আর নেই

একই সঙ্গে রোমান্টিসিজম ও রিয়ালিজম যার সিনেমায় মূর্ত হয়েছে—সেই চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত আর নেই। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নির্মাতার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘তাহাদের কথা’, ‘লাল দরজা’, ‘উত্তরা’ ও ‘স্বপ্নের দিন’ তার বিখ্যাত সিনেমা। ২০০৮ সালে স্পেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। পরিচালক হিসেবে পেয়েছেন দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তাছাড়াও তার আরো তিনটি ছবি সেরা সিনেমা হিসেবে পেয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ‘গভীর আড়ালে’, ‘কফিন কিংবা সুটকেশ’, ‘রোবটের গান’ ইত্যাদি তার কবিতার বই। মধ্যবিত্ত জীবনের খুঁটিনাটি তার চলচ্চিত্র ও সাহিত্যে ফুটে উঠেছে।

বুদ্ধদেব কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন বুদ্ধদেবের মৃত্যু ‘বিরাট ক্ষতি’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও টুইট করে শোক প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, ‘তার (বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত) বহুমাত্রিক কাজ সমাজের সবগুলো স্তর ছুঁয়ে গেছে।’ বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত গৌতম ঘোষ ও অপর্ণা সেনের সঙ্গে বাংলার বিকল্প সিনেমা আন্দোলনে যোগ দেন। তার প্রথম দিকের সিনেমায় নকশালবাড়ি আন্দোলন উপজীব্য হয়েছে।

শুরুর দিকে তিনি ছিলেন অর্থনীতির শিক্ষক। সেই কাজ ছেড়ে নেমে পড়েন চলচ্চিত্র দুনিয়ায়। ‘দুরত্ব’ তার প্রথম পরিচালিত সিনেমা। প্রথম সিনেমা সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। শুরুর দিকে সত্যজিৎ রায়ের বাস্তবধর্মী সিমেনা দেখে অনুপ্রাণিত হন। পরে নিজের পথটি ঠিকই খুঁজে নেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।

অভিনেতা প্রসেনজিৎ টুইট করেছেন, ‘একে একে সবাই যেন হারিয়ে যাচ্ছেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত শুধু ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতেই নয়, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতের এক উজ্জ্বল নাম।’

অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র বুদ্ধদেবের ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সেসময়ের স্মৃতিচারণে করে শ্রীলেখা লিখেছেন, ‘স্বল্পভাষী ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। একমাত্র কাজ নিয়ে নায়িকা ও অভিনেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন। বাকি সময় নিজের মতো চুপচাপ থাকেন। অনেক পরিচালক শুটিংয়ে আড্ডা দেন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে। বুদ্ধদেব বাবু তেমন ছিলেন না। ফলে, ভয়ে ভয়ে একটু দূরত্ব বজায় রেখেই চলতাম।’

বাংলাদেশের মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে লিখেছেন, ’আমি নানাভাবে তার কাছে ঋণী। একজন মাস্টার চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তিনি অবশ্যই আমাদের প্রজন্মকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছিলেন। আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না।’

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন