গুলজারকে যেভাবে বদলে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ

কবি, গীতিকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গুলজারের জীবনে প্রাপ্তি কম নয়। কি নেই তার ঝুলিতে! চলচ্চিত্র-সাহিত্যে অবদান রাখায় ভারত সরকারের পদ্মভূষণ, সাহিত্য আকাদেমি, দাদাসাহেব ফালকে এবং পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মানা পেয়েছেন। এছাড়াও অস্কার, গ্র্যামি এবং ২২বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। ভারতীয় সাহিত্যে—বিশেষ করে উর্দুসাহিত্যে গুলজার একটি অবিস্মরণীয় নাম। আর সেই গুলজারের জীবনের মোড় বদলে দিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

তার জীবনে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা অনন্য। তিনি সুযোগ পেলেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলেন না। কি সেই অবদান? এবিষয়ে স্পষ্ট করে বলেছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে এক টিভি সাক্ষাৎকারে। ২০১৫ সালে কালার্স টিভির ‘দ্য অনুপম খের শো’-এর দ্বিতীয় সিজনে তিনি বিষয়টি খোলাসা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘দেশবিভাগের পর শরণার্থীরা ছোট ছোট দোকান করেছিল। সেখানকার একটি দোকানে পত্রিকা ও বই বিক্রি হতো। সপ্তাহে চার আনায় সেখান থেকে বই ধারও নেওয়া যেত। যত ইচ্ছে বই পড়া যেতো।’ গুলজার সেই দোকান থেকে বই ধার নেয়া শুরু করলেন।

রবীন্দ্রনাথের ‘দ্য গার্ডেনার’

দোকানদার ভাবতেন এক সপ্তাহে একজন মানুষ আর কত বই পড়বে! কিন্তু গুলজারের গোয়েন্দা উপন্যাস পড়ার নেশা ছিল। একরাতেই একটি বই শেষ করে ফেলতেন। পরদিন আবার দোকানে গিয়ে হাজির হতেন। গুলজারের ভাষায়, ‘দোকানদার বিরক্ত হয়ে গেলেন আমার ওপর। তার তো লোকসান হচ্ছিলো। বললেন, “চার আনায় তোমাকে কত বই দেবো আমি!” তারপরও তিনি উপরের দিক থেকে একটি বই বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “এই নাও—এটা নিয়ে যাও। আমার কাছে আর বই নেই।” বইটি ছিল রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি কবিতার বই ‘দ্য গার্ডেনার’। এই মুহূর্তটিকে কবি গুলজার এভাবে বর্ণনা করেন, ‘সেই লোকটি (দোকানদার) জানতেন না, যখন তিনি ওই বইটি বের করছিলেন তখন আসলে তিনি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছিলেন।’

 

গুলজার অনূদিত ‘বাগবান’

সেই সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, সেই বই তার মনে গেঁথে যায়। বইটি তাকে অভিভূত করে। এই বই পড়ার পর গুলজারের পড়াশোনার ধরণ আমূল বদলে যায়। জানান, আজো তিনি রবীন্দ্রনাথকে সমানভাবে ভালোবাসেন। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে গুলজারের মন্তব্য, ‘তিনি একজন মাস্টার, অনেক বড় কবি। ভারতে আমরা এখনো তাকে চিনতে পারিনি।’

আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায়, গুলজার সেই বইটি আর ফেরত দেননি। পরবর্তীতে তিনি ‘দ্য গার্ডেনার’ হিন্দিতে অনুবাদ করেন। হিন্দি সংস্করণের নাম দেন, ‘বাগবান’। মূল ‘দ্য গার্ডেনার’ বইটি বের হয় ১৯১৩ সালের অক্টোবর মাসে। প্রকাশক লন্ডনের ম্যাকমিলান। এই বইয়ে মোট ৮৫টি কবিতা স্থান পায়। মার্কিন লেখক হেলেন কেলারও ‘গার্ডেনার’  বইটি পড়েছিলেন।

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন