অনির্বাণের চোখে কে সেরা ‘ব্যোমকেশ’

অনির্বাণ

উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ অবলম্বনে অনির্বাণ ভট্টাচার্য নির্মাণ করেছেন ওয়েব সিরিজ ‘মন্দার’। গত ১৯ নভেম্বর হইচইয়ে মুক্তি পাওয়া এই সিরিজে অনির্বাণ অভিনয়ও করেছেন। তবে এই সিরিজের অভিজ্ঞতায়ই তিনি মনে করেন, পরিচালক এবং অভিনেতা—তার এই দুই সত্ত্বার মধ্যে যথেষ্ট দ্বন্দ্ব আছে।

‘মন্দার’ সিরিজের গল্পে ‘ম্যাকবেথ’-এর রাজ পরিবারের জায়গায় আছে গেইলপুরের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। এতে অনির্বাণের সঙ্গে সোহিনী সরকার, দেবেশ রায়চৌধুরী, দেবাশিস মণ্ডল, শঙ্কর দেবনাথ, সুদীপ শুভম ধাড়া, সজল মণ্ডল, অঙ্কুর, অনির্বাণ ভট্টাচার্য প্রমুখ অভিনয় করেছেন। ‘মন্দার’ নির্মাণ করতে গিয়ে তার নতুন এক অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানান অনির্বাণ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার পরিচালকদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।

আমার অভিনেতার মন যেটা, মানে যে ভাবে নিজের মধ্যে অভিনয় তৈরি করি কিংবা চরিত্রায়ন করি, তার জন্য আমার পরিচালকেরা আমায় যে স্পেস দিয়েছেন বা পরিসর বা ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন, আমি যদি আমার পরিচালনায় অভিনয় করতে যেতাম, ভয়ঙ্কর রেগে যেতাম নিজের উপরে।’’

আধিপত্য বিস্তারের এই প্রবণতার উৎস অবশ্য অনির্বাণ জানেন না। তার ভাষায়, ‘‘আমি যে ভাবে পরিচালনার শিক্ষা নিয়েছি, তার মধ্যে এটা ছিল না। আমি মূলত যার কাছ থেকে পরিচালনার শিক্ষা নিয়েছি, তার পরিচালনা পদ্ধতির মধ্যেও কিন্তু এটা নেই।’’ পরিচালনায় অনির্বাণকে দীক্ষা দিয়েছেন অভিনেতা ও নাট্যপরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়।

তবে এই প্রবণতা নিয়ে অনির্বাণ আসলে চিন্তিত নন। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো আরো কাজ করবো। অবশ্যই আমি নিজেকে ডেভেলপ করতে করতে যাবো। হতে পারে, এখন পরিচালক হিসেবে আমি যে দিকে যাচ্ছি, ভবিষ্যতে ঠিক উল্টো দিকে চলে গেলাম। সম্পূর্ণ অন্য একটা পদ্ধতিতে কাজ করা শুরু করলাম। কাজ করা মানেই সেখানে বদলাতে বদলাতে যাওয়া।’’ ভবিষ্যতে ক্যামেরার পেছনে আবারো দাঁড়ানোর ইচ্ছা আছে বলেও জানান তিনি।

অভিনেতা হিসেবে অনির্বাণের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কাজ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্র সত্যান্বেষী ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ রূপে পর্দায় হাজির হওয়া। তবে তার আগে টলিউড ও বলিউডে উত্তমকুমার, রজিত কপূর থেকে এখনকার অনির্বাণ ভট্টাচার্য, গৌরব চক্রবর্তী, আবীর চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, সুশান্ত সিংহ রাজপুতসহ অনেকেই ‘ব্যোমকেশ’ হয়েছেন।

ব্যোমকেশ চরিত্রে উত্তর কুমার

অনির্বাণ জানালেন, তার চোখে সেরা ‘ব্যোমকেশ’ উত্তমকুমার। সত্যজিৎ রায়ের নির্দেশনায় ‘চিড়িয়াখানা’ চলচ্চিত্রে উত্তম এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আর যারা বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে? অনির্বাণ বলেন, “জীবিতদের মধ্যে সকলেই ভাল। তবে আমার সবচেয়ে ক্ষুরধার লেগেছে আবীরদাকে। ওকে দেখে মনে হয়েছে ব্যোমকেশ এ রকমই। যিশুদাও ভাল। বিশেষ করে অঞ্জনদার নির্দেশনায় ‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’ ছবিতে।”

অঞ্জন দত্ত ও অরিন্দম শীলের পরিচালনায় আবীর এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। বাংলা ধারাবাহিকের ‘ব্যোমকেশ’ গৌরবেরও প্রশংসা করেন অনির্বান। জানান, তিনি নিজেও ব্যোমকেশ চরিত্রে ফিরবেন সুযোগ এলেই।
গত বছরের ডিসেম্বরে মূকাভিনয় শিল্পী নিরঞ্জন গোস্বামীর মেয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব মধুরিমাকে বিয়ে করেন অনির্বাণ। তাদের বিয়ের ছবি অনলাইনে প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই মধুরিমার সিঁদুর পরার ধরন নিয়ে নানা কটূক্তি শোনা যাচ্ছিল।

এর বিপরীতে অনির্বাণ বলেন, ‘‘আসলে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ট্রোলে ‘ইমিউনড’ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এগুলি আর ভাবায় না কাউকে। এই সমস্ত অশ্লীল কথা যারা বলেন, তারা আসলে এ সব থেকে অক্সিজেন পান। সমাজ এখন এই জায়গাতেই চলে এসেছে। হয়তো সকলে মিলে একসঙ্গে ফোঁস করে উঠলে এসব বন্ধ হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাঙালিরা কখনোই একসঙ্গে কিছু করে না।’’

সম্প্রতি ‘চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ চলচ্চিত্রে খলনায়ক চরিত্র দিয়ে বলিউডেও পা রাখলেন অনির্বাণ। চলচ্চিত্রে তার সঙ্গে আছেন বলিউড তারকা রানি মুখার্জি।

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন