সত্যজিতের দেয়া পারিশ্রমিক নেননি কিশোর কুমার

কিশোর কুমার

উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমারের আজ জন্মদিন। কম সিনেমায় অভিনয় করেননি—তবে সবশেষে তিনি কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তার গাওয়া গান শুনছে। এখনো তার গান ও গান গাওয়ার স্টাইল শ্রোতাদের আন্দোলিত করে। এজন্য তাকে ‘চিরসবুজ’ কণ্ঠশিল্পীও বলা হয়। তার গান বহু অভিনেতার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। হিন্দি-বাংলা ছাড়াও তিনি অসমীয়া, মারাঠি, গুজরাটি, ভোজপুরি, মালয়ালম ও উর্দু ভাষায়ও গান করেছেন। ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসে এক মহান কণ্ঠশিল্পীর নাম—কিশোর কুমার।

১৯২৯ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের বর্তমান মধ্য প্রদেশের খণ্ডওয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া কিশোরের নাম ছিল আভাস কুমার। বোম্বেতে এসে হয় কিশোর কুমার। বাবা কুঞ্জলাল গাঙ্গুলি ছিলেন একজন উকিল। মায়ের নাম গৌরী দেবী। বড় ভাই অশোক কুমারের সহযোগিতায় সিনেমায় কাজ করা শুরু হয় চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে। ১৯৪৯ সাল থেকে বোম্বেতে বসবাস শুরু করেন। কিশোর মন পড়ে থাকে গানে, কিন্তু তখনকার তারকা অভিনেতা এবং কিশোরের বড় ভাই অশোক চান ভাইটি অভিনয়ে নাম করুক। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত কিশোর কুমার ২২টি সিনেমায় অভিনয় করেন—১৬টিই ফ্লপ হয়। স্বাভাবিকভাবে তাকে আর কেউ অভিনেতা হিসেবে নিতে সাহস করতেন না। তবে ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তার অভিনীত বেশ কয়েকটি সিনেমা বক্স অফিসে সফল হয়। তবে তার জীবন বদলে দেয় কবি রবীন্দ্রনাথ ও কণ্ঠশিল্পী কেএল সায়গল। দুজনের প্রভাব কিশোর কুমারের ওপর যথেষ্ট রয়েছে।

কিশোর ও শচীন

তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সংগীতবিষয়ক শিক্ষা ছিল না। এজন্য তো একবার সংগীত পরিচালক সলিল চৌধুরী তাকে সিনেমা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য কণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই সলিলের সঙ্গেই কত হিট গান করেছেন কিশোর! তারপর শচীন দেব বর্মন ও রাহুল দেব বর্মনের সঙ্গে মিলে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য অমর গান। রাজেশ খান্না, জীতেন্দ্র, দেব আনন্দ, অমিতাভের মতো সুপারস্টারেরা যেন অসম্পূর্ণ কিশোর কুমারের কণ্ঠ ছাড়া। সেরা প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে পেয়েছেন আটবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।

একটি চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে শেষ করি। কিশোর কুমার সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ (১৯৬৪) সিনেমায় গান (আমি চিনি গো চিনি) করেছিলেন। চলচ্চিত্র সমালোচক শ্রীরাম তাম্রকার জানিয়েছেন, সত্যজিৎ কিশোরকে এই গানের জন্য সম্মানি দিতে চেয়েছিলেন, কিশোর তা না নিয়ে সত্যজিতের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিলেন। শুধু তাই নয়, অর্থের অভাবে যখন ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমার শুটিং বন্ধ হয়ে যায়, তখন ৫ হাজার টাকা দিয়ে সত্যজিৎ রায়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কিশোর কুমার। এমনই ছিলেন এই শিল্পী।

রাহুল দেব ও কিশোর কুমার

এই মহান শিল্পীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার কিছু সেরা হিন্দি ও বাংলা গানের কথা পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চায় থ্রিসিক্সটি বিনোদন

১) চিঙ্গারি কোই ভরকে
২) হামে তুমসে পেয়ার কিতনা
৩) কোরা কাগজ থা ইয়ে মন মেরা
৪) তুম আগয়ে হো
৫) আপকি আঁখো মে কুছ
৭) দিল অ্যাসা কিসিনে মেরা তোরা
৮) সাগর কিনারে
৯) ও মাঝি রে
১০) কাভি বেকাসি নে মারা
১১) মেরে নেইনা
১২) দেখা এক খাব
১৩) আগার তুম না হোতে
১৪) তেরে মেরে মিলান
১৫) মানজিলে আপনি জাগাহ
১৬) দিলবার মেরে কাবতাক মুঝে
১৭) নয়ন সরসী কেন ভরেছে জলে
১৮) একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে
১৯) তোমায় পড়েছে মনে, আবার শ্রাবণ দিনে
২০) সেদিনও আকাশে ছিল কত তারা
২১) কি আশায় বাঁধি খেলাঘর

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন