চিত্রনায়িকা পরীমনি প্রথমে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। নিজের ভেরিফাইড পেজে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেছেন, তিনি ‘শারীরিক নির্যাতনের শিকার’ হয়েছেন এবং তাকে ‘রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে’।
তিনি এর বিচার চান। তিনি আরো অভিযোগ তুলেছিলেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে এ ঘটনার কথা জানালেও সহযোগিতা পাননি। পরীর এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জায়েদ খান। শুধু তাই নয়, এ ঘটনা সংক্রান্ত আরো কিছু তথ্য জায়েদ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছেন। সোমবার দেয়া তার বক্তব্যটি তুলে ধরা হলো,
“ধন্যবাদ। আসলে বয়সে তরুণী (পরীমনি) আমার হাত ধরেই তো আসলে ফিল্মে এসেছে, ওর প্রথম নায়ক তো আমি। ওর অনেক কথাই তো অনেক সময় ধরি না, বাট কিছু কথা আপনাদের তো বলতেই হবে। সেটা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার সময় ও আমাদের এখানে আসে। এসে ও কোনো কিছুই ক্লিয়ার করছিলো না, শুধু বলছিলো আমি আমার মধ্যে নাই, বিচার চাই, বিচার চাই। কি বিচার, কার বিরুদ্ধে বিচার, এটা কিন্তু ক্লিয়ার করছিলো না।
পরে এক পর্যায় কিছু জিনিস বলেছে, বলার পর আমি বললাম যে তুমি কি চাও? তারপর আমি বললাম, আমি সাংবাদিক সম্মেলন করি, মিশা ভাইকে ডেকে সমিতি থেকে। থানায় যাই চলো, কেন মামলা নিবে না! এটা একটা স্পর্শকাতর ঘটনা। বললো, এটাও না, আমার একটা চাওয়া আছে।
তার সাথে আরো লোকজন ছিল। আমি বললাম, তুমি কি ব্যক্তি জায়েদ খানের কাছে এসেছো- নাহ শিল্পী সমিতির সেক্রেটারির কাছে এসেছো? সে বললো, শিল্পী সমিতির সেক্রেটারির কাছে এসেছি। তাহলে তোমাকে তো একটা লিখিত দিতে হবে। বললো, দেবো। আসলে লিখিত জরুরি না, কিন্তু অভিযোগ করতে গেলে লিখিত জরুরি। সংগঠন তো জায়েদ খান একা চালায় না। এখানে ২১ জনের মিলিত একটি সংগঠন। সবার মতামত ছাড়া কোনো অভিযোগ নেয়া যায় না। তারপর বললো, আমার শুধু একটাই চাওয়া, আমি আইজিপি মহোদয়ের সাথে দেখা করতে চাই। এটা তোমরা ব্যবস্থা করে দিবা। আমি বললাম ওনার নাম্বারটা ম্যানেজ করে দেই, তুমি এসএমএসে কথা বলো। বললো, না এভাবে হবে না- আমি দেখা করতে চাই। আমি বললাম এখন তো হবে না, রাত ১০টা বাজে। বৃহস্পতিবারের দিন নিশ্চিই বাসায় চলে এসেছে। উনার তো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে, কাল তো শুক্র, শনি-রবিবারে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার চেষ্টা করবো। দুই দিন একটু ওয়েট করো, তারপর ব্যবস্থা আমরা একটা করবো। তারপর ও বললো, দায়িত্ব নিলা? আমি বললাম, হ্যাঁ দায়িত্ব নিলাম। তুমি চিন্তা করো না আমরা সাথে আছি। ও কিন্তু এখানে বসে খাওয়া-দাওয়া করলো।
এরপর দেখলাম ওর মন খারাপ গাড়িতে উঠে বসে আছে যায় না। রাত বাজে ১২টা, আমি বের হয়ে যাচ্ছি। যায় না, যায় না, মন খারাপ। সে বললো, আমি ইনসিকিউর ফিল করছি। তারপর আমি রাত বাজে ১২টা-১টা, ওকে নিজে ড্রাইভ করে বনানীর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসি। সাথে ওর মামা আর ওই ড্রেসম্যান জিমিও ছিল আমার গাড়িতে। আর পিছনে ছিল ওর গাড়ি।
আমি বললাম, তুমি কোনো কিছু টেনশন করবা না। কোনো কিছু লাগলে বলবা। আর আমি রবিবারের মধ্যে ডেট নিচ্ছি আইজিপির কাছ থেকে। আর যদি তোমার খারাপ লাগে তুমি এফডিসি চলে এসো।
রবিবার দুপুরে ও আমাকে একটা এসএমএস করেছে। এসএমএসে বললো, কিছু করলা? আমি বললাম, তুমি টিভি দেখো, আইজিহপি মহোদয় রাজশাহীতে আছেন।…উনি কালকে হয়তো আসলে যাবো আমরা। মিশা ভাইয়ের সাথে আলাপ করেছি। অলরেডি তোমাকে নিয়ে আমরা একটা মিটিং কল করেছি, কোনো অসুবিধা নেই। আগে উনার কাছে যাবো তারপর একটা পদক্ষেপ নিবো। শিল্পী সমিতি সবসময় তোমার সাথে আছে। ওর চাওয়াই ছিল একটা আইজিপি মহোদয়ের সাথে দেখা করা।
এরপর কি হলো রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল, সংবাদ সম্মেলন করলো। আমরা এর কিছুই জানি না। ওর মনে হয়েছিলো, আমরা ওকে ঘুরাচ্ছি, আসলে বিষয়টা তা না। ও যদি আমাদের কাছে একটি সঠিক পদক্ষেপ চাইতো যে, আমি সংবাদ সম্মেলন করতে চাই, আমরা ওর সাথে থাকতাম যদি বলতো মামলা করতে আমার সাথে থানায় যেতে, যেতাম। কিন্তু ওর একটাই কথা ছিল আইজিপি মহোদয়ের সাথে কথা বলা। কিন্তু আমরা তো জানি তার সাথে কথা বলতে একটা নিয়মের ব্যাপার আছে।
এরপর এই ব্যাপারে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জনাব খালেদ সাহেব দু থেকে তিনবার আমাকে ফোন দিয়েছেন। বলেছেন, আমরা তোমাদের পাশে আছি। তিনি বলেছেন, আমি ডিসির সাথে কথা বলেছি, ওসির সাথে কথা বলছি মামলা নেয়ার জন্য।”
তিনি আরো জানান, “শিল্পী সমিতির কাজ শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষা করা।…শিল্পীদের টাকা দেয় না কেউ- এটা মীমাংসা করে দেয়া।…শিডিউল ঠিক করে দেয়া। এটা তো কোনো আদালত বা বিচারকের কার্যালয় না। আমরা পারবো শিল্পীদের সাথে থাকতে কিন্তু যে শিল্পী ভিক্টিম সে কি পদক্ষেপ নিবে এটা তার ওপরে।”
জায়েদ মনে করিয়ে দেন, “শিল্পীদের দেখে মানুষ শেখে এবং শিল্পীরা সমাজের বিবেক। আমাদের দেখে মানুষ চুল কাটে, আমাদের ফলো করে।…এমন সব কার্যক্রমের জড়িত থাকবো না, যাতে মানুষ আমাদের দিকে আঙুল তুলতে না পারে এবং মানুষ যেনো আমাদের দেখে শিখে। এমন কোন কার্যক্রম, এমন কোনো কোথাও যাওয়া যাবো না, যাতে শিল্পী সমিতি লজ্জিত হবে বা শিল্পী হিসেবে আমরা লজ্জিত বোধ করবো।”