স্বাধীনতা আর বন্ধুত্বের চলচ্চিত্র ‘দ্য ফ্যালকনার’

এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র আগাগোড়াই ওমানে শুটিং করা হলো। চলচ্চিত্রের নাম ‘দ্য ফ্যালকনার’। এক ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন পশ্চিমা নির্মাতা অ্যাডাম শোবার্গ ও শিন উইনস্লো। আলাদা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা দুই বন্ধুর সত্য ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মিত। চরিত্রগুলোর স্বাধীনতা আর সীমাবদ্ধতার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, বাজপাখির মতোই উড়তে গিয়েও কোথাও যেন ঠেকে যাওয়া – এই বৈপরীত্য চলচ্চিত্রটির কাহিনী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর প্রাচ্যের প্রতি পশ্চিমা চলচ্চিত্রের গল্পে যে দৃষ্টিভঙ্গি আমরা দেখতে পাই, এই চলচ্চিত্রের উপস্থাপনায় তার সবটুকুই এড়িয়ে গেছেন নির্মাতারা।

পশ্চিম চলচ্চিত্রে সাধারণত প্রাচ্যের দেশগুলোতে যেমন ঘোলাটে দেখানো হয়, তার বদলে ওমানের ঝলমলে প্রাকৃতিক আলোর মাঝে পাথুরে পাহাড় আর জলাশয়ের সৌন্দর্য ‘দ্য ফ্যালকনার‘ চলচ্চিত্রে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট উপাদান আর ছন্দ, যেমন – মৌমাছির গান, শিশুদের কলরব এসবও মিশে গেছে গল্পের স্রোতে। শক্তিশালী চিত্রনাট্যের প্রভাব চলচ্চিত্রের সংলাপে যেমন আছে, তেমন সংলাপবিহীন মুহূর্তগুলোর গভীরতাও ফুটে উঠেছে চরিত্রগুলোর অভিব্যক্তিতে। সঙ্গে আছে স্যামুইয়েল স্টুয়ার্টের করা অনবদ্য আবহসঙ্গীত।

‘দ্য ফ্যালকনার‘ চলচ্চিত্রে ওমানের ছোট্ট এক গ্রামের বাসিন্দা কিশোর বন্ধু তারিক আর কাই। দুজনেই ভাঙাচোরা এক চিড়িয়াখানায় কাজ করে। চলচ্চিত্রের প্রথমদিকে কাজের পাশাপাশি সৈকতে ঘুরে, আর অর্থহীন আলোচনায় এই মানিকজোড়ের দিন কাটে। দুজনের মাঝে বিভেদটা স্পষ্ট হয় এক আগন্তুকের সঙ্গে তাদের আলাপে। তারিক ওখানকারই বাসিন্দা, পরিবারের খরচ মেটাতে কিছু বাড়তি আয়ের চেষ্টার পাশাপাশি কোনোরকমে হাই স্কুল শেষ করাটাই তার কাছে বিশাল ব্যাপার। আর কাই হলো সাদা চামড়ার এক পশ্চিমা কিশোর, যে এই গ্রামে এসেছে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। পরিবার চায় সে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা নিক। তারিক চরিত্রে আছে রামি যাহার, আর কাই চরিত্রে রুপার্ট ফেনেসি।

তারিকের বোন আলিয়ার বিয়ে হয় প্রচুর আয়োজন করে। সেই উৎসবের রেশ না কাটতেই অসহনীয় নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আলিয়া ঘরে ফিরে আসে। বিয়ের সম্পর্ক সে শেষ করতে চায়, কিন্তু তাতে অনেক খরচ। নিরুপায় তারিক চিড়িয়াখানা থেকে পশুপাখি চুরি করে কালোবাজারে বিক্রি করতে শুরু করে। একপর্যায়ে তার চোখ পড়ে একটি বাজপাখির ওপর। কাই চায় পাখিটিকে ছেড়ে দেয়া হোক, আর তারিক চায় শিকারি পাখিটি কোনো বিত্তশালী ক্রেতার কাছে চড়া দামে বিক্রি করে দিতে।

সাধারণ চোখে এই বাজপাখিকে তারিকের বন্দিদশার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, আর কাইকে দেখা যেতে পারে সাদা চামড়ার এক উদ্ধারকারীর ভূমিকায়। কিন্তু এই চলচ্চিত্রে বিষয়টি বরং উলটো – বোনের রক্ষাকারী নায়ক তারিক নিজেই, আর কাই তার সহকারী। কাইয়ের চরিত্রটি এখানে তারিকের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন, কিন্তু মায়ার বন্ধনে জড়ানো। ভালোবাসা আর দায়িত্বের তাড়নায় তারিক অবৈধ এই প্রাণি ব্যবসায় জড়ায়। বিপরীতে তাদের এই অভিযানে কাই ঠিক কতদূর যেতে চায় তা বেছে নেয়ার মতো স্বাধীনতা তার আছে।

চলচ্চিত্রের কল্পনা থেকে বাস্তবকেও ছুঁয়ে যায় ‘দ্য ফ্যালকনার’। চলচ্চিত্রের শেষে সত্যিকারের তারিক ও কাইয়ের ছবি দেখা যায় – নিজেদের উদ্ধার করা পশুপাখির মাঝে বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসছেন বন্ধুত্বের হাসি। তাদের ব্যক্তিত্ব আরও জ্যান্ত হয়ে ওঠে তাতে। সংলাপে বন্ধুত্বের জয়জয়কার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি। তবে চলচ্চিত্রে চরিত্রগুলো যেখানে প্রতীকী অর্থ বহন করছিলো, সেখানে ছবিগুলোতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি আর গভীরতা।

এমন আরো সংবাদ

সর্বশেষ বিনোদন